ডিএমপি নিউজঃ মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তহবিল গঠনের জন্য সকল পুলিশ সদস্য তাদের এক দিনের বেতন প্রদান করবেন। বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) জনাব এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম এর সভাপতিত্বে আজ রবিবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় (এপ্রিল-জুন ২০১৭) সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। দিনব্যাপী এ সভায় সকল পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তাদেরকে মাদকের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিবে তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান অথবা তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে মাদক বিরোধী আন্দোলনকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার জন্য মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা বিশেষ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত ও তদারক করতে হবে। তিনি জেলার পুলিশ সুপারদেরকে শিশু নির্যাতন মামলা ব্যক্তিগতভাবে তদারক করার নির্দেশ প্রদান করেন। আইজিপি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সড়কে ডাকাতি প্রতিরোধে যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশীর ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। বিশেষ করে টোল প্লাজা এবং ফেরি ঘাটে যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশী বাড়াতে হবে।
আইজিপি সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাইওয়ে পুলিশ এবং জেলা পুলিশকে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেন। তিনি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গাড়ি চালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নিদের্শ প্রদান করেন।
আইজিপি জেলা পর্যায়ের সকল সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় ও সুসম্পর্ক বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি পুলিশিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখছে। তিনি কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরো জোরদার করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জনগণের সাথে পুলিশের সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে। জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে অপরাধ দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আইজিপি বলেন, পুলিশের সেবা নিতে আসা জনগণের সাথে সদাচরণ করতে হবে। তাদেরকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা প্রদানে তৎপর হতে হবে।
সভায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (প্রশাসন) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গত কোয়ার্টারের (এপ্রিল-জুন/২০১৭) সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সভায় জঙ্গি হামলা, অপহরণ, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, চোরাচালান দ্রব্য, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক উদ্ধার, সড়ক দুর্ঘটনা, গাড়ি চুরি, রাজনৈতিক সহিংসতা, অপমৃত্যু, পুলিশ আক্রান্ত মামলাসহ দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে সারাদেশে ৫৪ হাজার ৭৩১টি মামলা রুজু হয়েছে। যা গত জানুয়ারী-মার্চ ২০১৭ সময়ের তুলনায় প্রায় ৯.৭৩ ভাগ বেড়েছে। পুলিশি অভিযান ও তৎপরতা বৃদ্ধির কারণে উদ্ধারজনিত মামলা বেড়েছে। ফলে আলোচ্য কোয়ার্টারে পূর্বে কোয়ার্টারের তুলনায় বেশি মামলা রুজু হয়েছে। আলোচ্য সময়ে সারাদেশে মাদক দ্রব্য, চোরাচালান দ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধারের পরিমাণ বেড়েছে। সিঁধেল চুরি, চুরি, ডাকাতি মামলা গত জানুয়ারি-মার্চ/২০১৭ কোয়াটারের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে, একই সময়ে দস্যুতা, দ্রুত বিচার, খুন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, পুলিশ আক্রান্ত মামলা বেড়েছে। অপহরণ এবং এসিড নিক্ষেপ সংক্রান্ত মামলা অপরিবর্তিত রয়েছে। একই সময়ে পুলিশ উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে।
অনুষ্ঠানে এসবির অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশনস্) মোঃ মোখলেসুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী, ডিআইজি (অপারেশনস্) ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, ডিআইজি (অর্থ) এ কে এম শহিদুর রহমান, ডিআইজি (হাইওয়ে) মোঃ আতিকুল ইসলাম, ডিআইজি (সিটি) মোঃ মনিরুল ইসলাম, এআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) মোঃ মনিরুজ্জামান, সিআইডির এসএস শেখ মোঃ রেজাউল হায়দার প্রমুখ ব্যক্তব্য রাখেন।
সভায় এসবির অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, রেক্টর (অতিরিক্ত আইজিপি) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশনস্) মোঃ মোখলেসুর রহমান, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, এপিবিএন’র অতিরিক্ত আইজিপি সিদ্দিকুর রহমান, রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ আবুল কাশেম, পুলিশ টেলিকমের অতিরিক্ত আইজিপি বিনয় কৃষ্ণ বালা, শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ নওশের আলী এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।