বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম বলেছেন, সমাজে মাদকের বিস্তার ও মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার রোধে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। তিনি মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং তাদের পুর্নবাসনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য নিয়মিত ধ্বংস করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
আইজিপি আজ সোমবার দিনব্যাপী পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কোয়াটারলি কনফারেন্সে’ (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৭) সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন। সভায় সকল পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জনগণ ও পুলিশের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে গত ২৮ অক্টোবর দেশব্যাপী কমিউনিটি পুলিশিং ডে পালনের জন্য আইজিপি সকল পর্যয়ের পুলিশ সদস্যদেরকে ধন্যবাদ জানান। আইজিপি বলেন, সামাজিক সমস্যা ও বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কমিউনিটি পুলিশিং একটি কার্যকর মাধ্যম। পুলিশের সাথে জনগণের সুসর্ম্পক তৈরি হলে পুলিশ ভীতি কমে আসবে, সমাজে অপরাধ কমবে।
আইজিপি নারী নির্যাতন ও শিশু নির্যাতন মামলা অধিকতর গুরুত্বসহ তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি থানায় নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রতিটি থানায় শিশু অধিকার সেল গঠনের জন্য একটি আলাদা কক্ষ তৈরি করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় সারাদেশে যথাযথভাবে ট্রাফিক আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যানজট নিরসন এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বজায় রাখার লক্ষে উল্টা পথে সাধারণ যানবাহন চলাচল করতে না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। পুলিশের গাড়ি উল্টা পথে না চালানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
সভায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) আবু হাসান মুহম্মদ তারিক জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৭ কোয়ার্টারের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সভায় অপহরণ, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদকদ্রব্য, চোরাচালান দ্রব্য, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক উদ্ধার, সড়ক দুর্ঘটনা, গাড়ি চুরি, রাজনৈতিক সহিংসতা, অপমৃত্যু, পুলিশ আক্রান্ত মামলাসহ দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে সারাদেশে ৫৬ হাজার ৪৭৪টি মামলা রুজু হয়েছে, যা গত এপ্রিল-জুন ২০১৭ সময়ের তুলনায় প্রায় ৩.১৮ ভাগ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে সারাদেশে মাদক দ্রব্য এবং চোরাচালান দ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্বের কোয়ার্টারের তুলনায় মামলার সংখ্যা বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে ডাকাতি, এসিড নিক্ষেপ, সড়ক দুর্ঘটনা এবং পুলিশ আক্রান্ত মামলার সংখ্যা কমেছে। অপরদিকে দস্যুতা, খুন, অপহরণ এবং নারী নির্যাতন মামলার সংখ্যা বেড়েছে। আলোচ্য কোয়ার্টারে গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে ৪০৯টি। এর মধ্যে পুলিশ ২৯৭টি গাড়ি উদ্ধার করেছে।
অনুষ্ঠানে আইজিপি বাংলাদেশ পুলিশ নিদের্শমালা সংক্রান্ত ১৬টি পুস্তিকার মোড়ক উন্মোচন করেন।
সভায় এসবির অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর (অতিরিক্ত আইজিপি) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান, পুলিশ একাডেমীর প্রিন্সিপ্যাল মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশনস্) মোঃ মোখলেসুর রহমান, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী, শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ নওশের আলী, পুলিশ টেলিকমের অতিরিক্ত আইজিপি বিনয় কৃষ্ণ বালা এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
পরে আইজিপি এসবি, র্যাব, পিবিআই, নৌ পুলিশ, ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশসহ সকল মেট্রোপলিটন এবং রেঞ্জের প্রধানদের সাথে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর ও বিনিময় করেন।