ডিএমপি নিউজ: আজ (১০ মার্চ ২০১৯) রবিবার বিকাল ৪.০০টায় রাজধানীর কড়াইল এরশাদ স্কুল মাঠে মাদক ও জঙ্গি বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, বিপিএম (বার), পিপিএম । তিনি কড়াইল বস্তির বিভিন্ন মাদক স্পটে একটি মাদ্রাসা, একটি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র, একটি লাইব্রেরী, মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং চিত্রাঙ্কণ ও সঙ্গীত শিক্ষালয়ের উদ্বোধন করেন। এই স্পটগুলোতে পূর্বে মাদক কেনা বেচা হতো।
উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমিশনার বলেন, কড়াইল ও সাততলা আদর্শনগর বস্তি মাদকমুক্ত করার কাজে আপনাদের সাথে থাকতে পেরে আমি আনন্দিত। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আপনারা যাতে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে পারেন সেই জন্য এই উদ্যেগ । আমরা উদ্যেগ নিয়েছি আপনারা বাস্তবায়ন করেছেন।
তিনি বলেন, পুলিশ, রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের পক্ষে একা মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মাদকের এই ক্যান্সারকে রোধ করতে হবে । মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।
কমিশনার আরও বলেন, মাদকের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে রুখে দিতে হবে। মাদক দমন করতে যেকোন পদক্ষেপ নিতে আমরা পিছপা হব না। ভয়াবহ এই মাদকের সাথে যেই জড়িত থাকবে তাকেই আদালতে হাজির করা হবে। আমরা আমাদের পরিবারকে বাঁচাতে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাব।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদকে উপড়ে ফেলেছি। ওদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করেছি। মাদকের ভয়বহতার করুন ফল আপনারা কেউ ভোগ করুন আমরা তা চাই না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আসুন আমরা মাদক নির্মূলে কাজ করি। মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করি।
এ সময় কমিশনার মাদক নির্মূলে অবদান রাখায় কড়াইল আদর্শনগর ও সাততলা আদর্শনগর বস্তির লিটন ভান্ডারী ও বাবুলকে ৫০০০/- করে আর্থিক পুরস্কার প্রদান করেন। এছাড়াও সুমি ও মাহমুদাকে সেলাই মেশিন ও বাউল হিম্মতের হাতে হারমোনিয়াম, তবলা তুলে দেন।
উল্লেখ্য, বনানী থানা এলাকায় ঢাকা শহরের বৃহৎ ২টি বস্তি রয়েছে। একটি সাততলা বস্তি ও অপরটি কড়াইল বস্তি। এই বস্তি দুটিতে প্রায় ৩ লক্ষাধিক লোক বসবাস করে। পূর্বে এই বস্তি দুটি মাদকের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত ছিল। বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাড়াঁশী অভিযানের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে বস্তি দুটিকে প্রায় মাদক শূণ্য করা হয়েছে। গত ০২ বছরে এ এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বনানী থানায় ৩৩২ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা গুলি তদন্ত শেষে ৩৯৭ জন আসামীর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। বস্তি দুটির নাম কড়াইল ও সাততলা বস্তি থেকে কড়াইল আদর্শ নগর ও সাততলা আদর্শ নগর এর নামকরণ করা হয়েছে। সাততলা ও কড়াইল আদর্শনগর এলাকায় ১৪০ জন সদস্যদের নিয়ে মোট ১৪টি মাদক নির্মূল কমিটি গঠন করা হয়েছে। এলাকার সাধারণ লোকজনের সমন্বয়ে গঠিত মাদক নির্মূল কমিটির সদস্যরা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন এবং তাদেরকে এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছেন।
মাদক নির্মূল কমিটির সদস্য ও এলাকার স্থানীয় জনগণ মহাখালী সাততলা এলাকার মাদক সম্রাজ্ঞী সিমার মাদক স্পটকে ডে-কেয়ারে রুপান্তরিত করেছেন। যা গত ০৬ জুন ২০১৮ তারিখে ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া মহোদয় উদ্বোধন করেন। পরবর্তী সময়ে সিমার অপর একটি মাদক স্পটে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। সাততলা বস্তি এলাকায় সর্বমোট ১২ জন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাদক নির্মূল কমিটির সদস্য ও স্থানীয় জনগণ সামজিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
কড়াইল আদর্শ নগর এলাকায় মাদক নির্মূল কমিটির সদস্য ও স্থানীয় জনসাধারন সর্বমোট ২২ জন মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামজিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। মাদক ব্যবসায়ী জলিলের মাদক স্পটে ইতোপূর্বে কড়াইল আদর্শ নগর কমিউনিটি ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন কড়াইল ও সাততলা ডে-কেয়ার সেন্টারে দরিদ্র কর্মজীবী মায়েরা কাজে যাবার পূর্বে তাদের সন্তানদের সেখানে নিশ্চিন্তে রেখে যেতে পারেন।
উক্ত সমাবেশে ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং কড়াইল ও সাততলা বস্তির জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।