ডিএমপি নিউজ: শুধমাত্র মাদক উদ্ধার এবং সংশ্লিষ্ঠ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করেও অপরাধ পুরোপুরি নির্মূল করা কঠিন। কেননা অনেক সময় এর পেছনে কাজ করে বড় কোন অপরাধী নেটওয়ার্ক। মাদক মামলা তদন্তের সনাতন পদ্ধতিতেও মূল অপরাধী পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয় না। কারণ মূল হোতারা নিজেরা সামনে আসে না। ফলে দীর্ঘদিন পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী কর্তৃক অভিযান পরিচালনার পরেও মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। মাদক দ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধ তদন্তে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি হচ্ছে “Follow The Money”। এই পদ্ধতিতে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত সবার নাগাল পাওয়া সম্ভব। সম্প্রতি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর তদন্তের ক্ষমতা সিআইডিকে অর্পন করায় এ ধরনের মামলা তদন্তে একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানার ০২টি ইয়াবা সংক্রান্ত মাদক মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিপুল পরিমান তথ্য আসতে শুরু করে তদন্তকারী দলের কাছে। এদের মধ্যে কেউ প্রধান তোহা, কেউ আশ্রয়দাতা, কেউ বাহক, কেউ মধ্যস্ততাকারী, কেউ অর্থের যোগানদাতা আবার কেউ অর্থের স্থানান্তরকারী। সনাতন এবং প্রচলিত আইন প্রয়োগ করে এই বিশাল সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব নয়। প্রয়োজন ছিল একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। আর সেটিই হচ্ছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)। সিআইডি পুলিশ কর্তৃক নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানার ০২ টি ইয়াবা সংক্রান্ত মাদক মামলা হতে জানা যায়, গত ০৩/০৪/২০১৭ এবং ০৪/০৪/২০১৭ ইং তারিখে ফতুল্লা থানা পুলিশ শরীফ ও মোঃ আকতার কামাল নামক ২ জনকে ৩,০০০ ও ৫,০০০ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা রুজু করে। মামলার তদন্তভার সিআইডি গ্রহন করার পর জানতে পারে তারা টেকনাফ এর ইয়াবা সিন্ডিকেট এর হোতা ফরিদুল আলম এর দেশব্যাপী বিস্তৃত ইয়াবা নেটওয়ার্ক এর সাথে জড়িত । সিন্ডিকেটের সদস্যরা টেকনাফ হতে বড় বড় ইয়াবার চালান ঢাকা, নরসিংদী, নারায়নঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে আসছে। তারা মাদক বিক্রয়লব্ধ টাকা ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ ও ডাচ বাংলা ব্যাংক এর মোবাইল ব্যাংকিং রকেট) এবং কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে সংগ্রহ করে । তদন্তে বেড়িয়ে আসে দেশব্যাপী মাদক সিন্ডিকেটের এই সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি মাদক বিক্রিত অবৈধ টাকা আছে। এসব অবৈধ টাকার লেনদেন ঢাকার জন্য তারা ট্রলার, লবন, চিনি, গরু, মহিষ ইত্যাদি ব্যবসার ছত্র ছায়া ব্যবহার করতো। শুধু তাই নয় তারা ইসলামী লেবাস ধারণ এবং দান খয়রাত করে নিজেদেরকে সমাজের ভাল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে জীবন যাপন করছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম(বার) এর নেতৃত্বে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক ও এএসপি নিজাম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম ও এএসপি ইকবাল এর সমন্বয়ে গঠিত ২টি চৌকষ দল দীর্ঘদিন বিশেষ অনুসন্ধান শেষে চট্টগ্রামের হোতাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। যাদের প্রত্যেকের নামে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনসহ অন্যান্য আইনের একাধিক মামলা রুজু আছে।
এছাড়াও অবৈধ অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ০৩ জন বিকাশ এজেন্ট ও একজন মোজাহার স্টোর এর এজেন্টসহ মোট চারজনকে অবৈধ কাজে ব্যবহৃত শতাধিক সিম, ২০ টি মোবাইল ফোনসেট ও অবৈধ ভাবে উপার্জিত নগদ ২০,০০০০/- বিশ লক্ষ টাকা জব্দকরত গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- নুরুল হক ওরফে ভুট্টো, নুরুল আলম, মোঃ বেলাল, জালাল উদ্দিন, নরুল আলম, সৈয়দ আলম, আরিফ, তৈয়ব, আব্দুর রহমান, নুরুল মোস্তফা এবং একজন মোজাহার স্টোর এর এজেন্ট।
তাদের বিভিন্ন ব্যাংকের একাধিক ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশ একাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় মাদকদ্রব্য বিক্রিজনিত কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। উল্লেখ্য আসামী ফরিদুল আলম ও নুরুল আলম দুজন পরস্পর ভাই। তাদের বিভিন্ন একাউন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১১ কোটি টাকার লেনদেন নুরুল হক ওরফে ভুট্টো এর বিভিন্ন একাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় ৯৬ লক্ষ টাকার লেনদেন নুর মোহাম্মদ এর বিভিন্ন একাউন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় ৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। দুবছর আগেও এদের কেউ ছিল রিক্সা চালক, কেউ জেলে বা লবন চাষী কিন্তু এখন সবাই কোটি কোটি টাকার মালিক । কুঁড়ে ঘর হয়েছে সুরম্য অট্টালিকা। শুধু তাই নয় তারা মাদক ব্যবসা হতে অবৈধভাবে লাভবান হয়ে নামে বেনামে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন করেছে।
এই বিপুল পরিমান টাকা ও সম্পদ অবৈধ মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্জন, স্থানান্তর ও হস্তান্তর হয়েছে বিধায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু হয়েছে। যা সিআইডি কর্তৃক তদন্তাধীন আছে।