বডি বিল্ডারদের সাধারণত যে ভাবে দেখতে অভ্যস্ত, তার থেকে অনেকটাই আলাদা তিনি। মঞ্চের একপাশে হিজাব আর কালো পোশাকে আগাগোড়া ঢেকে দাঁড়িয়েছিলেন। পাশে ছিলেন আরও প্রতিযোগী। বিচারকের মুখ থেকে নিজের নামটা শুনে আনন্দে চোখ চিকচিক করে উঠল। সম্প্রতি কোচির দুর্বার মলে অনুষ্ঠিত মিস্টার কেরল বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় মহিলা পাওয়ার লিফ্টিং বিভাগে জয়ী হয়েছেন মাজিজিয়া বানু। কেরল পাওয়ার লিফ্টিং অ্যাসেসিয়েশন তাঁকে ‘স্ট্রং ওম্যান অফ কেরল’ খেতাব দিয়েছে।
তবে কেরলের স্ট্রং ওম্যান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বড় একটি কৃতিত্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন মাজিজিয়া। বডি বিল্ডারদের নিয়ে সমাজের গড়ে তোলা বাঁধাধরা ছক ভেঙে দিয়েছেন তিনি। মিস্টার কেরল প্রতিযোগিতায় জেতার চেয়েও এই প্রাপ্তিটাই তাঁর কাছে অনেক বেশি। জানান, কেরলের একমাত্র হিজাব পরা বডি বিল্ডার।
মাজিজিয়ার বয়স ২৩ বছর। কোঝিকোড়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রী তিনি। দাঁতের চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা তাঁর। তার জন্য জোরকদমে চলছে শেষ বর্ষের প্রস্তুতি। ছোট থেকেই খেলাধূলায় তিনি বিশেষ আগ্রহী। ছোট থেকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং যথেষ্ট শক্তিশালী মাজিজিয়া।
কী ভাবে বডি বিল্ডিংয়ে আসা? মাজিজিয়া জানান, ২০১৬ সালে মনে প্রথম ইচ্ছাটা জন্মেছিল বক্সিং নিয়ে। কিন্তু হিজাব পরে বক্সিং রিংয়ে ঢোকার অনুমতি মেলেনি তাঁর। তাঁর পরই স্বামী তাঁকে বডি বিল্ডিংয়ে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু হিজাব পরে বডি বিল্ডিং? তাও কি সম্ভব? নাকি শেষমেশ বক্সিংয়ের মতোই এই স্বপ্নটাও ছেড়ে দিতে হবে! বাড়ির বাইরে হিজাব ছাড়া কোনও পোশাকেই যে তিনি সাবলীল নন! প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল মনে। মুশকিল আসান করে দেন তাঁর স্বামীই।
স্বামী তাঁকে বেশ কিছু মহিলা বডি বিল্ডারদের ভিডিও দেখান। মিশরের বডি বিল্ডার ছিলেন ওই মহিলারা। যাঁরা হিজাব পরে এবং দেহের বেশিরভাগটা আবৃত রেখেই বডি বিল্ডিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। অনুপ্রেরণা পান মাজিজিয়াও। ভিডিও-র ওই মহিলাদের মতো পোশাক তিনি কিনে ফেলেন। আর সেগুলো পরেই বডি বিল্ডিং প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।
সম্প্রতি মিস্টার কেরল বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় ৫২ কিলোগ্রাম পাওয়ার লিফ্টিং বিভাগে জয়ী হয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালে এশিয়ান পাওয়ার লিফ্টিং প্রতিযোগিতায় রুপো জেতেন। এ বার তাঁর স্বপ্ন বিশ্ব পাওয়ার লিফ্টিং প্রতিযোগিতা।
হিজাবকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তরায় মনে করেন যারা, হাসি মুখে তাঁদের প্রতি মাজিজিয়ার বার্তা, ‘‘হিজাবে আমি ভীষণভাবে স্বাচ্ছন্দ্য। পাশে থাকার জন্য বাবা-মা এবং স্বামীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। স্বপ্ন পূরণে মহিলাদের এগিয়ে আসা উচিত।”