‘লিমফেটিক ম্যালফরমেশন’ এ আক্রান্ত ছোট্ট মুক্তামণির রোগ আরোগ্যযোগ্য ও অস্ত্রোপচারের যোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সম্প্রতি মুক্তামণিকে ভিডিওতে দেখে এবং তার বিভিন্ন টেস্টের প্রতিবেদন দেখে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল এক ই-মেইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে এই মন্তব্য জানায়।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন একথা জানান।
এর আগে বুধবার মুক্তামণিকে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ-সংক্রান্ত সভা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন ছোট্ট মুক্তামণির চিকিৎসা ঢাকা মেডিকেল কলেজই করবে। শনিবার তার বায়োপসি করা হবে।
তিনি বলেন, মুক্তামণির চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা ১৪ জন মিটিং করেছি। এতে ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞসহ সব ক্ষেত্রের ব্যক্তিরাই ছিলেন। মুক্তামণিকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মিটিংয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে- মুক্তামণির চিকিৎসা আমরাই করব।
তিনি বলেন, এর আগে আমরা সিঙ্গাপুরে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা মুক্তামণির চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো সহায়তা করতে পারবে কি না, জানতে চেয়েছিলাম। তারা বলেছে, তাদের পক্ষে এ রোগীর দায়িত্ব নেয়া সম্ভব না।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা মুক্তামণির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের আমাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছি। তার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। এটি করতে যথেষ্ট সময় লাগবে। শনিবার আমরা তার প্রথম বায়োপসি করব।
১২ বছরের ছোট্ট মুক্তামণির জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পুরোপুরি শয্যাশায়ী। যে বয়সে হেসেখেলে দিন কাটানোর কথা- তখন তার সময় কাটছে হাসপাতালের বেডে। মুক্তামণির সেরে উঠতে যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। তাকে এখন ডাক্তারদের পরামর্শে পুষ্টিকর খাবার দেয়া হচ্ছে। দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে তার ব্যয়বহুল ও বিরল রোগের চিকিৎসা চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না জানতে পেরে চিকিৎসা সহায়তার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তার চিকিৎসার ব্যাপারে সব সময় সহায়তা করা হচ্ছে। তবে পাঁচ সদস্যের পরিবারের সবাই এখন ঢাকায় থাকায় মুক্তামণির পরিবার মানসিক ও আর্থিকভাবে ভীষণ অস্থির সময় কাটাচ্ছে। এখন তার দাদাও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার কামারবাইসা গ্রামে মুক্তামণিদের বাড়ি। হীরামণি ও মুক্তামণি দুই যমজ বোন, ছোটভাই আল আমিনের বয়স এক বছর তিন মাস। মাত্র দেড় বছর বয়সে মুক্তামণির এ রোগ ধরা পড়ে। প্রথমে এলাকার চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা চলে। সে সময় অনেকটা ভালোই ছিল মুক্তামণি। তখন সে স্কুলেও যেত। মীর্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বোনের সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বর্তমানে হীরামণি সেই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হলেও এখন পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থান করছে। অর্থাভাবে মুক্তামণির চিকিৎসা বন্ধ রেখে বাড়িতেই মেয়েকে রেখেছিলেন মা-বাবা। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে মুক্তামণির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে তাকে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনা হয়।
মুক্তামণির হাতে তার শরীরের চেয়ে বেশি ওজনের বাড়তি অংশ থাকায় তার পক্ষে এখন স্বাভাবিক হাঁটাচলা করা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। এটি পুরোপুরি শরীর থেকে অপসারণ করতে পারলে তবেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে ছোট্ট এই মেয়েটি।