সাভারের মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ম. হামিদ রন্জু মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি বাইনোকুলার বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে প্রদান করেছেন । আজ সোমবার সকালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর হাতে তিনি বাইনোকুলারটি উপহার হিসেবে প্রদান করেন।
এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের রক্ষক এবং ইতিহাস ও ক্লাসিক্যাল আর্ট বিভাগের প্রধান ড. স্বপন কুমার বিশ্বাসসহ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের এ ধরনের সামগ্রী জাদুঘরে সংরক্ষণ বা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে পারলে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা কাহিনীও জানতে পারবে। ” তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ছাড়াও কেউ যদি বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন কোনও বস্তু বা নিদর্শন জাতীয় জাদুঘরে প্রদান করতে চায় তাহলে তাও সাদরে গ্রহণ এবং প্রদানকারীর নাম-ঠিকানাসহ প্রদানকৃত বস্তুটি জাদুঘরে যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ম. হামিদ রন্জু জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতের দেরাদুন মিলিটারি একাডেমিতে দ্বিতীয় ব্যাচে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে (ঢাকার সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকায়) যোগ দেন। প্রায় ৯ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ সেন্টিমিটার প্রস্থের বাইনোকুলারটি তাকে যুদ্ধ চলাকালে শত্রুপক্ষের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন একজন শিক্ষক প্রদান করেছিলেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের কোনও এক দিনে তাকে বাইনোকুলারটি প্রদানকারী সেই শিক্ষকের নাম তিনি এখন আর স্মরণ করতে পারেননি।
প্রায় ৭১ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “ভারতের দেরাদুন মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণকালে বেশ কিছু নথিপত্র তার কাছে ছিল। সেই নথিপত্রগুলো ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রদান করেছি। তবে যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত এই বাইনোকুলারটি আমার সন্তানরা বাবার স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু আমি মারা গেলে এই জিনিসটি খোয়া যেতে পারে বা যত্নে নাও থাকতে পারে- এমনটি মনে করে যুগ যুগ সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য জাতীয় জাদুঘরে প্রদানের সিদ্ধান্তই আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে বলে বাইনোকুলারটি জাদুঘরে প্রদান করলাম। “
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের রক্ষক এবং ইতিহাস ও ক্লাসিক্যাল আর্ট বিভাগের প্রধান ড. স্বপন কুমার বিশ্বাস বাইনোকুলারটিসহ মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ম. হামিদ রন্জুর যাবতীয় তথ্যাদি জাদুঘরে উপহার প্রদানের প্রস্তাবপত্রে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাইনোকুলারটি প্রদর্শনের জন্য জাদুঘরের গ্যালারিতে রাখবেন বলে জানান তিনি।