ডিএমপি নিউজঃ “মুজিববর্ষে পুলিশ নীতি, জনসেবা আর সম্প্রীতি” এই প্রতিপাদ্যে উদযাপিত হলো কমিউনিটি পুলিশিং ডে ২০২১। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ শনিবার জনগণকে সাথে নিয়ে এ দিবসটি পালন করে থাকে বাংলাদেশ পুলিশ।
আজ ৩০ অক্টোবর, ২০২১ (শনিবার) সকালে পূণ্যভূমি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ এসআই শিরুমিয়া মিলনায়তনে রমনা ও মতিঝিল বিভাগের কমিউনিটি পুলিশের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কমিউনিটি পুলিশিং ডে ২০২১ উদযাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ পুলিশ শিল্পগোষ্ঠির মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক নৃত্য পরিবেশনের মধ্যদিয়ে জনগণ ও পুলিশের সম্পর্ক তুলে ধরা হয়। এরপর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, বিশেষ অতিথি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ পুলিশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম(বার), মূখ্য আলোচক প্রথিতযশা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথা সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও সভাপতি ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম(বার) কেক কেটে ও বেলুন উড়িয়ে কমিউনিটি পুলিশিং ডে ২০২১ এর শুভ উদ্বোধন করেন।
শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার ও সদস্যদের পুরস্কৃত করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেন, এটা রাজারবাগ, পুলিশের পূণ্যভূমি। যে বাহিনীটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য প্রথম ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলো, সেই বাহিনী এই, সেই জায়গা এ রাজারবাগ। এই রাজারবাগেই বঙ্গবন্ধু পুলিশকে জনতার পুলিশ হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। আজ আমরা সেই দৃশ্যটি দেখতে পাচ্ছি। করোনার সময় সন্তান যখন তার পিতা-মাতাকে রাস্তায় ফেলে চলে যাচ্ছেন, বঙ্গবন্ধুর সেই পুলিশ আজ কাঁধে করে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন। শুইয়ে দিচ্ছেন কবরে।
কমিউনিটি পুলিশের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সম্প্রীতির যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সম্প্রীতি যে ভায়োলেন্স করার চেষ্টা করা হচ্ছিল জনগণের সহায়তায় আমরা তা প্রতিরোধ করতে পেরেছি, পেরেছি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে। এজন্য আমাদের কমিউনিটিকে আরো বেশি সজাগ থাকতে হবে, পুলিশকে সহায়তা করতে হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের অভিভাবক আধুনিক পুলিশ গড়ার কারিগর অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ পুলিশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম(বার) বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং বাংলাদেশে নতুন ধারণা হলেও এশিয়ার অনেক দেশে এটা একটি পুরাতন ধারণা। সিঙ্গাপুরেও এ পদ্ধতি বেশ প্রচলিত। আমেরিকায় যখন সাদা আর কালো দাঙ্গা বাঁধতো তখনও তারা কমিউনিটি পুলিশিং পদ্ধতি শুরু করে সাফল্য পায়।
অপরাধের ভীতিমূক্ত সমাজ বির্নিমাণের গুরুত্ব উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, “আমাদেরকে এমন এক সমাজ তৈরি করতে হবে যেখানে অপরাধ থাকবে না, এজন্য সামগ্রিকভাবে সমাজ সম্মেলন করতে হবে। সমাজের সাথে, নাগরিকের সাথে পার্টনারশিপ পুলিশিং গড়ে তুলতে হবে”।
কমিউনিটি পুলিশের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “জনগণের সাথে মেল বন্ধনের কারণে আমরা ইতোমধ্যে অনেক জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে পেরেছি। আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা রক্তপাত পছন্দ করেন না, কলহ পছন্দ করেন না। আমাদের দেশের পুলিশ জনবান্ধব, শিশু বান্ধব, নারী বান্ধব”।
সাইবার ক্রাইমের প্রতি হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, সনাতন অপরাধ কমলেও টেকনোলজি বৃদ্ধির পাশাপাশি সাইবার অপরাধ বাড়ছে। আমরাও টেকনোলজি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এ দেশকে রক্ষা করবো, জনগণকে রক্ষা করবো, এর বিরুদ্ধে আমরা ইস্পাতসম প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
মূখ্য আলোচনায় প্রথিতযশা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কলাম লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগে পুলিশের ভূমিকার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি যেন একটি তীর্থস্থানে এসেছি। এটি এমন এক জায়গা যেখান থেকে পাকিস্তানি আর্মির বিরুদ্ধে প্রথম বুলেটটি ছুড়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলা হয়েছিল।
পুলিশ পরিবারের এ সন্তান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বাবার আত্মত্যাগ স্মরণ করে বলেন, “অন্যদের সাথে আমার বাবা যখন পাকিস্তানি আর্মিদের গুলি খেয়ে পানিতে তিনদিন ধরে পঁচে ভাসছিলো, তাকে যখন ধরার অব্সথাও ছিলো না, শুধুমাত্র তাঁর গায়ে পুলিশের ইউনিফর্ম থাকার কারণে স্থানীয় জনগণ তাকে কবরস্থ করে। এজন্যই আমাদের দেশের পুলিশকে তাঁর সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির মানুষের সাথে মিশতে হবে, সুখে-দুঃখে তাঁদের পাশে থাকতে হবে। প্রাথমিক স্কুল থেকেই শিশুদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। তাহলেই বাল্য বিবাহসহ ইভটিজিংয়ের মতো সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে”।
করোনার সময় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা ও শূন্য দিয়ে গুণের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, জনগণকে সাথে নিয়ে পুলিশের অনেক সাফল্য আছে। মাঝে মাঝে দুএকটি খারাপ কাজ সকল অর্জনকে নষ্ট করে দেয়, এজন্য সর্বোপরি সকলকে ভাল মানুষ হতে হবে।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম(বার) বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারসহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্য ও জনগণকে সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিহতের স্মরণ করে বলেন, আপনার এলাকায় কী সমস্যা, তা চিহ্নিত করে আপনার থানার কমিউনিটি পুলিশ অফিসারকে সাথে নিয়ে সে সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় তা হলো কমিউনিটি পুলিশিং। আমরা সকলে এই সমাজেরই লোক, আমরা যদি একজনের পাশে না দাঁড়াই তাহলে এ সমাজ টিকবে না, রাষ্ট্র টিকবে না।
কমিশনার বলেন, আমার পুলিশের দুটো চোখ দিয়ে যা দেখা যায় না, কমিউনিটির শত শত চোখদিয়ে তার চেয়ে বেশি দেখা যায়। জনগণ ও পুলিশ একসাথে কাজ করে ইভটিজিং, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত একটি সুস্থ সমাজ গড়তে পারি। যেকোন জাতীয় দুযোর্গে আমরা আপনাদের পাশে আছি, আপনারাও আমাদের সাথে থাকলে অপরাধমুক্ত, অপরাধভীতিমুক্ত একটি সমাজ গড়ে তুলবো।
অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে স্বাগত বক্তব্যে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) কৃষ্ণ পদ রায় বিপিএম(বার), পিপিএম(বার) কমিউনিটি পুলিশিংয়ের উৎপত্তি, কেন কমিউনিটি পুলিশিং এ বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। তিনি বিট পুলিশিং সম্পর্কেও ধারণা দেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে কমিউনিটি পুলিশের রমনা থানা শাখার সদস্য এসএম সাইফুর রহমান বাদশা বাংলাদেশ ও বর্হিবিশ্বে পুলিশ ও জনসংখ্যার তুলনা করে বলেন, “আমাদের দেশে জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের সংখ্যা অপ্রতুল, এজন্য আমাদেরকেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও নীতিকে ধারণ করে মানুষের জন্য পুলিশের সাথে থেকে কাজ করতে হবে”।
কমিউনিটি পুলিশের মতিঝিল থানা শাখার সদস্য সচিব সাব্বির হোসনে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঢাকাবাসীর নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান।