মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করছে। খুব সহজেই অর্থ স্থানান্তর করা এবং কেনাকাটার সুবিধা থাকায় মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে লোকজন মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলছেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে মোবাইল আর্থিক সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই কোটি ৩০ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশের বেশি। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পেতে প্রতিদিন নতুন নতুন গ্রাহক রেজিস্ট্রেশন করছেন । মোবাইলের সাহায্যে শর্টকোড ডায়াল করে পিন নম্বর দিয়ে সহজেই টাকা স্থানান্তর করা যায় বলে মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে ঝুঁকিও থাকে অনেক।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিরাপদ রাখতে কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
পিন নম্বর গোপন রাখুন: যদি আপনার একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থাকে (যেমন বিকাশ, ডিবিবিএল) তবে প্রত্যেকটি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা পিন নম্বর সেট করুন। এই পিন নম্বর কেউ যেন জানতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
ভুয়া কাস্টমার কেয়ার থেকে সাবধান: যদি কেউ কাস্টমার কেয়ারের ভুয়া পরিচয় দিয়ে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট (যেমন বিকাশ) পিন নম্বর জানতে চায়, তাহলে পিন নম্বর না দিয়ে বরং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং সেবার হেল্পলাইনে ফোন দিয়ে অভিযোগ করুন। কারণ ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার থেকে কখনোই আপনার পিন নম্বর জানতে চাইবে না।
নিবন্ধিত সিমে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলুন: মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট অবশ্যই আপনার সঠিকভাবে নিবন্ধিত সিম দিয়ে খুলুন। নতুবা যেকোনো সময় আপনার একাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা অন্য কেউ তুলেও নিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সিমের বৈধ কাগজপত্র থাকলে সহজেই সিম তুলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পুনরায় ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রতারক থেকে সাবধান: অনেক প্রতারক বিভিন্নভাবে প্রলোভোন দেখিয়ে আপনার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। এসব প্রতারক থেকে সাবধান। দেখা যায়, অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে বলবে আপনি লটারি জিতেছেন, অমুক নম্বরে এত টাকা বিকাশ করলেই টাকা পাবেন’, কিংবা ‘জ্বীনের বাদশা’ সেজে ফোন করে বিকাশ করতে বলবে। তখন অনেকেই লোভে পড়ে মোবাইলে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এসব ফাঁদ থেকে সাবধান হোন। প্রতারকের ফোন নম্বরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পুরো ব্যাপারটি অবহিত করুন। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার হেল্পলাইনে অভিযোগ করুন।
ভুয়া কল ও মেসেজর ব্যাপারে সাবধান: মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে বিকাশ থেকে কেউ টাকা পাঠালে যে মেসেজগুলো আসে সেগুলোর মেসেজ প্রেরকের নামের স্থলে ‘bKash’ লেখা থাকে- অর্থাৎ মেসেজটি bKash (বিকাশ) থেকে এসেছে। এখন কেউ যদি অনলাইনের মেসেজিং সেবার মাধ্যমে আপনাকে bKash সেজে মেসেজ দেয় । অনেকেই আপনাকে এরকম প্রতারণামূলক মেসেজ পাঠিয়ে আপনার মোবাইলে ফোন করে টাকা ফেরত চাইবে। এরকম মেসেজ আসলে প্রত্যেকবার মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে ডায়াল করে ব্যাল্যান্স চেক করবেন যে একাউন্টে টাকা যোগ হল কিনা। অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট সেবার একাউন্ট নাম্বারে ডায়াল করে ব্যাল্যান্স জেনে নিবেন।
টাকা পাঠানোর আগে ফোন করে নিশ্চিত হোন: মোবাইল ব্যাংকিং অন্য কোন নম্বরে টাকা পাঠানোর আগে নিজ হাতে ফোনে সেই নম্বরে কল করে নিশ্চিত হোন যে আপনি টাকা পাঠালে তা সঠিক ব্যক্তির কাছে যাবে কিনা। নম্বর ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে ফোন নম্বর হুবহু নকল করে প্রতারকেরা আপনার আত্মীয়স্বজন পরিচয় দিয়ে ফোন করে টাকা চাইতে পারে। তাই টাকা পাঠানোর আগে যাকে টাকা পাঠাবেন তার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হোন।
সর্বশেষ ব্যাল্যান্সের হিসেব রাখুন: আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা আছে সেই হিসেবটা মনে রাখুন। জরুরী প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে। যেমন কাস্টমার কেয়ারে কোনো সমস্যায় পড়ে ফোন দিলে তারা ব্যাল্যান্স ও সর্বশেষ কয়েকটি লেনদেন সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে। মনে রাখবেন কাস্টমার কেয়ারে কখনোই আপনার পিন নম্বর জিজ্ঞেস করবেনা।
এছাড়াও যদি আপনার মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব মোবাইল ব্যাংকিং হেল্পলাইনে কল করে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।