যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে।
গত এক মাস ধরে চলছিল রমজান। রোজ রাখছিলেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সঙ্গে চলছিল প্রার্থনা।
আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের আশায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ধর্মপ্রাণ লাখো কোটি মানুষ আজ সকালে ভারী বর্ষণকে উপেক্ষা করে ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে সামিয়ানার নিচে আজ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষ উৎসব আমেজে সেখানে নামাজ আদায় করেন।
নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এ প্রধান জামাতে মহিলা ও বিদেশী কূটনীতিকদের নামাজ আদায়ে বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। মুসুল্লিদের জন্য ওযু, খাবার পানি ও মোবাইল টয়লেটেরও ব্যবস্থা ছিল।
জাতীয় ঈদগাহে সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানে নেয়া হয় তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদগাহে সকল প্রবেশ পথ এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নামাজের স্থানসহ ঈদগাহ মাঠের গোটা প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশের আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশীর পর আর্চওয়ে দিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে হয়।
প্রধান এ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে র্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন।
রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। এখানে এবারও ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল ৭টায়। এর পরপর আরো ৪টি জামাত যথাক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী, দ্বিতীয় জামাতে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মহিউদ্দিন কাসেম, তৃতীয় জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মাওলানা মুশতাক আহমাদ, চতুর্থ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস মাওলানা ওয়ালীয়ূর রহমান খান এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মাওলানা জুবাইর আহাম্মদ আল আযহারী ইমামতি করেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদুল ফিতরের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামাতে অংশ নেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এবার শোলাকিয়ায় ১৯২তম ইদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে। জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
পবিত্র এ দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সকল কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম্স, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
পবিত্র এ উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।-বাসস