গর্ভধারণের বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি খবরকে ভুয়া বলেছে যুক্তরাজ্যের ডেইলি মিরর।
‘মিসিসিপি হেরাল্ড’ নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রথমবার খবরটি প্রকাশের পর বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রবিহীন সেই খবর লুফে নিয়ে প্রকাশ করে, যার মধ্যে ডেইলি মিররও ছিল বলে স্বীকার করেছে সংবাদ মাধ্যমটির কর্তৃপক্ষ।
পরে অনুসন্ধানে ‘মিসিসিপি হেরাল্ড’ নামের ওয়েবসাইট থেকে খবরটি ছড়িয়ে পড়লেও সেটি আদতে কোনো পত্রিকাই নয় বলে নিশ্চিত হওয়ার কথা এক প্রতিবেদনে জানায় ডেইলি মিরর।
তারা বলছে, বাইলাইনে নামবিহীন ওই খবরে কথিত জমজ দম্পতির গল্প যে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বলা হয়, তারও কোনো নাম ছিল না। নামহীন এক চিকিৎসক মিসিসিপির জ্যাকসন এলাকার নামহীন একটি ক্লিনিকে কাজ করেন।
ভুয়া ওই খবরে বলা হয়, প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণ করতে না পারায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক দম্পতি জানতে পারেন তারা আসলে যমজ ভাইবোন।
মিসিসিপির একটি আইভিএফ-ক্লিনিকে ডিএনএ পরীক্ষার পর চিকিৎসকের মুখে এ কথা শুনে প্রথমে ওই দম্পতি প্রচণ্ড অবিশ্বাসে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন জানিয়ে খবরটিতে কথিত চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলা হয়, “নিয়মিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে আমরা তাদের ডিএনএ টেস্ট করেছিলাম। যদিও সাধারণত প্রয়োজন না থাকলে আমরা ডিএনএ টেস্ট করি না। কিন্তু এক্ষেত্রে ল্যাবের একজন সহকারী তাদের ডিএনএ টেস্ট করেন।”
এরপর তাদের তথ্য সংগ্রহের ফাইল ঘেঁটে ওই চিকিৎসক দুজনের জন্মসাল এবং জন্মতারিখ এক পান জানিয়ে খবরটিতে তার বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, “এটি দেখে আমি নিশ্চিত হই তারা যমজ ভাইবোন। তাদের বিষয়টি জানানোর পর তারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।”
“তাদের যুক্তি, একই জন্ম তারিখ এবং দেখতে অনেকটা এক হওয়া অনেক দম্পতিই আছেন। তারা ধরেই নেন, আমি তাদের সঙ্গে মজা করছি।”
পরে কাগজপত্র ঘেঁটে ওই দম্পতির বায়োলজিকাল বাবা-মা এক জানা যায় বলেও খবরটিতে উল্লেখ করে বলা হয়, তাদের বাবা-মা একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। পরিবারের অন্য কেউ নিহত দম্পতির যমজ ছেলে-মেয়েকে প্রতিপালন করতে রাজি না হওয়ায় শিশুদুটিকে রাষ্ট্রের দায়িত্বে নিয়ে নেওয়া হয়।
পরে ভিন্ন দুইটি পরিবার তাদের পালক নেয় এবং ওই দুই পরিবার পালক নেওয়ার সময় যমজ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু জানতে পারেনি। কলেজে পড়ার সময় তাদের দেখা হয় এবং দুজনে নিজেদের মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পাওয়ায় তারা বিয়ে করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবরটি ছাপা হলেও ডেইলি মিরর বলছে, ‘মিসিসিপি হেরাল্ড’ নামে কোনো অনলাইন পত্রিকা থাকার প্রমাণ না পেয়ে পাঠকদের মধ্যে খবরটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
‘মিসিসিপি সান-হেরাল্ড’ নামে একটি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে, যেটি ১৮৮৪ সাল থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে।
খবরটির বিষয়ে ‘মিসিসিপি সান-হেরাল্ড’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মিরর কর্তৃপক্ষ।
‘মিসিসিপি সান-হেরাল্ড’র রাতের পালার সম্পাদক কিম অ্যান্ডারসন কথিত যমজ দম্পতির খবরটি তাদের নজরেও পড়েছে জানিয়ে মিররকে বলেন, “আমরা অবশ্যই মিসিসিপি হেরাল্ডের নাম কখনও শুনিনি। মিসিসিপির কোনো ভবনে এরকম কোনো নামও দেখিনি। আমাদের সন্দেহ, এটা ভুয়া খবর। ”
খবরটি যে ভুয়া সেটি ওয়েবসাইটির অন্যান্য ইন্ডিকেটরগুলোও নির্দেশ করছে বলে জানিয়ে মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০ এপ্রিল থেকে প্রথমবার মিসিসিপি হেরাল্ড খবর প্রকাশ করেছে দেখা যায়।
তাদের কোনো ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা বা যোগাযোগের জন্য তাদের কোনো কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া নেই। মিসিসিপিহেরাল্ড ডটকম নামে ওয়েবসাইটির ডোমেইনও নিবন্ধন হয়ে গত বছরের নভেম্বরে।