যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে উগ্র ডানপন্থি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে বর্ণবাদ বিরোধীদের ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এতে কমপক্ষে এক নারীসহ ৩ জন নিহত হয়েছে।
এরপরই ঘটনাস্থল শার্লোটসভিল শহরে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। রাজ্যের গভর্নর টেরি ম্যাকঅলিফে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অনলাইন বিবিসি, জি নিউজ ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে বর্ণবাদ বিরোধীদের ব্যাপক সহিংসতা সামলাতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে কনফেডারেম পতাকা, বর্ম আর হেলমেট পরে একটি মিছিল বের করে চরম ডানপন্থি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা। গৃহযুদ্ধের সময়কার জেনারেল রবার্ট ই লি’র একটি ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই মিছিলের আয়োজন করে ডানপন্থিরা।
১৮৬১-৬৫ সালের গৃহযুদ্ধে দাসত্ব প্রথার পক্ষে লড়াই করে কনফেডারেট বাহিনী পরিচালনা করেন জেনারেল লি। বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনগুলোও এ সময় আলাদা মিছিল বের করেন। বিবিসি লিখেছে, একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। শহরে অনেক রাস্তায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বর্ণবাদবিরোধী কর্মীদের একটি সমাবেশের ওপর চলন্ত গাড়ি তুলে দেয়া হলে ৩২ বছর বয়সী একজন নারী নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ১৯ জন। এসব সমাবেশের জন্য কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপক্ষই একে অপরের ওপর বোতল, পাথর ছুড়ে মারে। এমনকি তারা পিপার স্প্রেও ব্যবহার করে। এর আগে শুক্রবার রাতেও মশাল মিছিল বের করেছিল শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা। যদিও শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, কিন্তু অনেক স্থানে বিছিন্নভাবে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছিল।
নিন্দা জানিয়ে বিপাকে ট্রাম্প: এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে সমালোচনার শিকার হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেন, এ সহিংসতার পেছনে সব পক্ষেরই দোষ রয়েছে। আলাদা করে উগ্র ডানপন্থীদেরকে দোষারোপ করেননি তিনি। এজন্য রিপাবলিকান সিনেটর কোরি গার্ডনার তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রাম্পের। করি গার্ডনার বলেন, ‘জনাব প্রেসিডেন্ট- আমাদের খারাপ (ইভিল)কে খারাপ বলেই ডাকতে হবে। এরা ছিলো শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী।আর এটা (সহিংসতা) ছিল অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ।’ ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা ‘সব পক্ষের’ ঘৃণা, গোঁড়ামি ও সহিংসতার এই মর্মান্তিক প্রদর্শনের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই।
শুধু উগ্র ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের আলাদা করে নিন্দা জানাননি ট্রাম্প। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বিডেনও। তিনি বলেন, ‘এখানে শুধু একটি পক্ষই আছে। এখানে (আমেরিকায়) বিদ্বেষ ও বর্ণবাদীতার কোনো স্থান নেই।’ শার্লোটসভিল একটি উদারপন্থী শহর হিসাবেই পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই শহরের ৮৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। তবে এখানকার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ জেনারেল লি’র ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর, শহরটি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের লক্ষ্য হয়ে ওঠে।