ডিএমপি নিউজঃ রোজা সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার’। রোজার অনেক ফজিলত রয়েছে। ‘রোজা আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে গোপন ইবাদত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজ হাতে রোজাদারদের পুরস্কৃত করবেন। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়ে বেশী ঘ্রানযুক্ত’: আল হাদিস। সুস্থ, সবল প্রাপ্তবয়স্ক সকল নর-নারীর উপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। যদি কেউ রমজান পেয়ে বিনা কারণে রোজা না রাখে তাহলে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। রমজানে রোজা না রাখা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করা। নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহ পরম দয়ালু। তাই রমজানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোজা না রাখা শীতিল করেছেন। আসুন পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে জেনে নেয়া যাক যেক্ষেত্রে রোজা ভঙ্গ বা না রাখা জায়েজ করা হয়েছে।
যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজঃ যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ এবং পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করতে হয় : ১. অসুস্থতার কারণে রোজা রাখার শক্তি না থাকলে কিংবা রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে অথবা সুস্থতা লাভে বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। ২. অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্তন্যদানকারিণী নারী যদি রোজা রাখেন, তাহলে তাঁর কিংবা তাঁর সন্তানের প্রাণনাশের অথবা অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে তাঁর জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। ৩. মুসাফিরের রোজা না রাখা কিংবা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে।
যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় এবং কাজা ও কাফ্ফরা ওয়াজিব হয় : ১. সঙ্গম করা। ২. পানাহার করা, তা কোনো খাবার হোক অথবা কোনো ওষুধ হোক। ৩. বৃষ্টির ফোঁটা মুখের ভেতর পড়ার পর তা স্বেচ্ছায় গিলে ফেলা। ৪. স্বেচ্ছায় ধূমপান করা। ৫. একটি গম কিংবা ওই পরিমাণ কোনো কিছু গিলে ফেলা।
যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় এবং শুধু কাজা ওয়াজিব হয় : ১. কোনো দৈহিক ওজরের কারণে পানাহার করা। তেমনিভাবে ভুলক্রমে পানাহার করার পর রোজা নষ্ট হয়েছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু পানাহার করা। ২. নাক ও কানের ভেতর ওষুধ ব্যবহার করা। ৩. মলদ্বার দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করানো। ৪. খাদ্যদ্রব্য নয় এমন কিছু, যেমন_খেজুরের আঁটি, তুলা, কাগজ, লোহা, কংকর, মাটি অথবা এর টুকরা ইত্যাদি গিলে ফেলা। ৫. কুলি করার সময় পানি গলার ভেতরে চলে যাওয়া। ৬. কানের ভেতর তেলের ফোঁটা কিংবা পানির ফোঁটা দেওয়া। ৮. রাত শেষ হয়নি মনে করে সুবহে সাদিক হওয়ার পর কোনো কিছু আহার করা অথবা স্ত্রী সহবাস করা। ৯. দাঁতের মধ্য থেকে ছোলা পরিমাণ কিছু বের করে খাওয়া।
যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় : ১. অপ্রয়োজনে কোনো জিনিসের স্বাদ আস্বাদন করা কিংবা চিবানো। ২. পরনিন্দা করা। ৩. ঝগড়া-ফ্যাসাদ করা। ৪. পূর্ণদিবস নাপাক অবস্থায় থাকা। ৫. টুথপেস্ট, মাজন কিংবা কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা। ৬. মুখে থুথু জমিয়ে রেখে গিলে ফেলা।
মাহে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর আমল ও নির্দেশে অপরিসীম গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। হজরত তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত_তিনি বলেন, একদা জনৈক বেদুঈন নবী করিম (সা.)-এর কাছে এল। তার মাথার চুল ছিল ইতস্তত বিক্ষিপ্ত। সে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আমাকে বলুন আল্লাহ আমার ওপর কত ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তখন তিনি বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত। কিন্তু যদি নফল নামাজ পড় তাহলে তা স্বতন্ত্র কথা। অর্থাৎ সেগুলোর সওয়াব ভিন্নভাবে পাবে। লোকটি বলল, আমাকে বলুন আল্লাহপাক আমার ওপর কতটা রোজা ফরজ করেছেন? নবী করিম (সা.) বললেন, গোটা রমজান মাসের রোজা ফরজ। কিন্তু তুমি যদি নফল রোজা রাখ তা হবে স্বতন্ত্র কথা। লোকটি আবার বলল, আমাকে বলুন আল্লাহ আমার ওপর কী পরিমাণ জাকাত ফরজ করেছেন? এবার প্রিয় নবী (সা.) তাকে ইসলামের আইনকানুন ও বিধিবিধান জানিয়ে দিলে সে বলল, সেই মহান সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য বিধান দিয়ে সম্মানিত করেছেন। মহান আল্লাহপাক আমার ওপর যা ফরজ করেছেন, আমি তার অধিকও কিছু করব না, আর কমও কিছু করব না। (বুখারি শরিফ)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অপর বর্ণনায় রয়েছে, বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে বন্দি করা হয় এবং রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় (বুখারি ও মুসলিম)। রমজানের রোজা মানুষের সব গুনাহ ও পাপ প্রবণতা, অন্যায় ও অসৎ মানসিকতা, পাশবিক কামনা-বাসনা এবং আত্মার সব ধরনের কলুষতাকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে রোজাদারকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে। এই মাসের ইবাদতের মাধ্যমে রোজাদাররা আল্লাহর সন্তুষ্টি, আল্লাহর ক্ষমা প্রদর্শন, আল্লাহর জিম্মাদারি, আল্লাহর ভালোবাসা ও আল্লাহর নিয়ামত লাভ করে থাকেন। আল্লাহ আমাদের রোজার পূর্ণাঙ্গ হক আদায়সহ রমজানের দিনগুলোর রোজা পালনের তাওফিক দান করুন।