ধূলিঝড় পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্যোগগুলোর একটি। সুচের অগ্রভাগের মত তীক্ষ্ণ ধূলিকণা ঘন্টায় শত কিলোমিটার বেগে ধাবিত হয়। শক্তিশালী ধূলিঝড় বায়ুমন্ডলের ৫/৬ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।
পৃথিবীর খুব অল্প সংখ্যক প্রাণীই এই ধূলিঝড় সহ্য করে টিকে থাকতে পারে। অসাধারণ সহ্য ক্ষমতা সম্পন্ন অ্যারাবিয়ান উট এদের মধ্যে সবচেয়ে সফল। কিন্ত মানুষের পক্ষে কি ধূলিঝড় সহ্য করে মরুভূমিতে টিকে থাকা সম্ভব! সভ্যতার কোলে বেড়ে ওঠা মানুষের পক্ষে অবশ্যই অসম্ভব।
কিন্তু একটি জাতি প্রায় ৩০০০ হাজার বছর ধরে, মরুভূমিতে টিকে থাকার কৌশল আয়ত্ত করেছে। অ্যারাবিয়ান উটকে বশ মানিয়ে হাজার বছর ধরে তারা মরুভূমিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
বেদুঈন ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত যাযাবর জাতি। এরা উটের সাহায্যে শক্তিশালী ধূলিঝড়ও পাড়ি দিতে সক্ষম। উটের প্রশস্থ পায়ের পাতা, মরুভূমির নরম বালিতেও চলার উপযোগী। উট ধূলিঝড়ে অকুতোভয় হলেও সঠিক স্থানে পৌঁছানোর জন্য বেদুঈনদের দিক নির্দেশনা প্রয়োজন।
একদিকে উটের অসাধারণ শারীরিক সক্ষমতা অন্যদিকে বেদুঈনদের মরুভুমি সম্পর্কে অসাধারণ পাণ্ডিত্য! এই দুইটি বিষয়ের সম্মিলন পুথিবীর কঠিনতম মরুভূমিকেও পদানত করেছে তারা।
রাতে মরুভূমিতে তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। অগ্নিকুণ্ডের চারদিকে বসে গল্পে মেতে ওঠা বেদুঈনদের ঐতিহ্য।
আরবের অনেক রূপকথা ও গল্প-কবিতার উৎস এই যাযাবর জাতিটি। বেদুঈনদের প্রাচীন একটি গাইড বই রয়েছে। যা লেখা হয়েছে পাহাড়ের গায়ে, পাথর খোদাই করে। হাজার বছর ধরে বেদুঈনরা পথে পথে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা খোদাই করে এসেছে। পানি ও ঘাসের উৎস থেকে শুরু করে রকমারি মানচিত্র লিপিবদ্ধ হয়ে আছে বিভিন্ন পাহাড়ের গায়ে।
বেদুঈনরা অসাধারণ প্রজ্ঞা, পরিশ্রম আর কৌশলে মরুভূমিতে এক ঐতিহাসিক জীবনধারা গড়ে তুলেছে। এই যাযাবরদের জীবন গল্পের চেয়ে রোমাঞ্চকর রূপকথার চেয়েও অবিশ্বাস্য।