“আমাজন জঙ্গল” এই নামটির সঙ্গে ছোট বড় সকলেরই কম বেশি পরিচিতি আছে। এটি একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ ফিমেল ওরারিয়র, অর্থাৎ মহিলা যোদ্ধা।
এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জঙ্গল যার বিস্তার পৃথিবীর সকল রেইনফরেস্টের দ্বিগুণ এবং যেখানে পুরো পৃথিবীর তিন ভাগের এক ভাগ প্রাণী বাস করে। আমাজন নদীকে ঘিরে এই জঙ্গল প্রায় সাড়ে ৫ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল । ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার আয়াতনবিশিষ্ট এই জঙ্গল বিশ্বের নয়টি দেশে বিস্তৃত যার ৬০ শতাংশ ব্রাজিলে, ১২ শতাংশ পেরুতে, ১০ শতাংশ কলোম্বিয়াতে এবং বাকি অংশ আরো ছয়টি দেশ জুড়ে রয়েছে।
৪০০ বিলিয়নের থেকেও বেশি গাছ আছে আমাজন জঙ্গলে এবং ১ হাজার ৭০০ থেকেও বেশি ভিন্ন প্রজাতির গাছ এ জঙ্গলে পাওয়া যায় যা পুরো বিশ্বের ২০ শতাংশ অক্সিজেন প্রদান করে। এ জঙ্গলে ৪০০ এর থেকেও বেশি ভিন্ন প্রজাতির আদিবাসি বসবাস করে যাদের সঙ্গে বাইরের পৃথিবীর কোনো যোগাযোগ নেই। এই জঙ্গলে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করে বলে ধারনা করা হয়, কিন্তু সঠিকভাবে আজো এদের সংখ্যা গণনা করা যায়নি এবং তারা আজও আদিম যুগের মানুষের মতো বসবাস করে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট আমাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। বিশ্বের কাছে এক অমূল্য ভাণ্ডার আমাজনের জঙ্গল। উষ্ণ পৃথিবীতে অক্সিজেন দিয়ে জীব বৈচিত্রকে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই আমাজন। এই অরন্যের ভয়াবহতা ও সৌন্দর্য নিয়ে তৈরি হয়েছে বহু লোমহর্ষক সিনেমা ও বই। সম্প্রতি ভয়াবহ দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এর একটা অংশ। আগুনে পুড়ে মারা গেছে কত শত না বিরল প্রাণি। এই আমাজনেরই কয়েকটি ভয়ঙ্কর প্রাণী সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পয়জন ডার্ট ফগ
ছোট সাইজ এবং রঙ-বেরঙের চমকানো শরীর দেখে অনেকেই নিরীহ বলে মনে করেন ‘পয়জন ডার্ট ফগ’ নামক ব্যাঙগুলোকে সকলেরই ইচ্ছে হবে হাতে নিয়ে একটু এর শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে। যদি আপনি এমনটা চান তাহলে যেনে নিন আপনার মৃত্যু অবধারিত।কারণ আমাজনে বসবাসকারী এ ক্ষুদ্র ব্যাঙগুলো পৃথিবীর বিষাক্ত প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম।এর বিষ রয়েছে শরীরের চামড়ার উপরে।এই ক্ষুদ্রাকৃতির উজ্জ্বল রঙের ব্যাঙকে শিকারিদের দূরে রাখার এক সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত।পয়জন ডার্ট ব্যাঙ মাত্র দুই ইঞ্চি লম্বা, কিন্তু এর বিষ দশজন শক্ত-সমর্থ মানুষকে মেরে ফেলতে যথেষ্ট।
গ্রিন অ্যানাকোন্ডা
আমাজন বলতেই অ্যানাকোন্ডা সাপের কথা চোখে ভাসে। এই অ্যানাকোন্ডারই অরেক জাত এই গ্রিন অ্যানাকোন্ডা। একে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাপ। আমাজন নদীতেই এদের দেখা মেলে। এদের দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়। ওজন ২৫০ কেজিরও বেশি।
অরপাইমা
বিশ্বের সুস্বাদু জলের বৃহত্তম মাছ এটি। পিরারুকু নামেও পরিচিত এরা। দৈর্ঘ্যে এরা প্রায় ১০ ফুট হয়। এরা মাংসাশী হয়।
ক্যান্ডিরু
এটি একটি ছোট প্রজাতির রক্তপিপাসু মাছ। এদের ভ্যাম্পায়ার ফিশ-ও বলা হয়। বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরুতে পাওয়া যায়।
পিরানহা
এই মাছের মধ্যে রেড বেলি পিরানহা খুবই ভয়ানক। আমাজন নদীর ত্রাস বলা হয় এই মাছকে। এরা ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। শিকার করে দলবদ্ধ ভাবে। এদের দাঁতে এত ধার যে নিমেষে বড় কোনো পশুকে সাবড়ে দিতে পারে।
বুল শার্ক
হাঙরদের দেখা মেলে সমুদ্রে। কিন্তু আমাজন নদীতেও এক ধরনের হাঙ্গর দেখতে পাওয়া যায়, যার নাম বুল শার্কের। বিশাল দেহী এই প্রাণিটি লম্বায় ১১ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওজন ৩০০ কেজিও হতে পারে।
দ্য পাকু
এদের পিরানহার বড় ভাই বলা হয়। মানুষের মত দাঁতই এদের বড় পরিচয়। এরা সর্বভুক।
ইলেকট্রিক ইল
এরা ক্যাটফিশ প্রজাতির। দৈর্ঘ্যে প্রায় সাড়ে আট ফুটের মত হয়। এদের শরীরে ৬০০ ভোল্টের মত বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয়। ব্ল্যাক কেমান: এদের আমাজন নদীর রাজা বলা হয়। দৈর্ঘ্যে প্রায় ২০ ফুট মতো হয়।
ব্ল্যাক কেমান
আমাজনে এক ধরনের বিশালদেহী কুমির দেখতে পাওয়া যায়, যার নাম ব্ল্যাক কেমান। এদের আমাজন নদীর রাজা বলা হয়। এই প্রাণিটি প্রায় ২০ ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে।
আমাজন জঙ্গলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল আমাজন নদী যা অ্যান্ডিস পর্বতমালা থেকে উৎপত্তি হয়েছে এবং যা লম্বাতে বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। কিন্তু জল প্রবাহের পরিমান হিসেবে এই নদী বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী যার জল প্রবাহ কোন সমুদ্রের থেকে কম নয় এবং এই নদীর সঙ্গে ১০০ টিরও বেশি শাখা নদী যুক্ত রয়েছে।এই নদীর কিছু অংশ এতো বড় যে নদীর এক কিনারে দাঁড়িয়ে অন্য প্রান্ত দেখা যায় না, কিছু কিছু জায়গায় যা ১৪০ কিলো মিটারেরে থেকেও বেশি চওড়া। আমাজন নদীতে প্রায় ৩ হাজারের থেকেও বেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এছাড়া অনেক বড় বড় সাপ ও বিশাল আকারের জলজ প্রাণীও বাস করে এই নদীতে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল ব্রাজিলে আমাজন নদীর ভূগর্ভে প্রায় ৩ কিলো মিটার নিচে আরো একটি ভূগর্ভস্থ নদী আছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, সভ্যতা যতই উন্নত হোক না কেন এখন পর্যন্ত আমরা পৃথিবীর কিছু অংশে পৌছাতে পারিনি। আমাজন জঙ্গলের বেশ কিছু জায়গা রয়েছে যা আজো আমাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। শুধু আমাজন জঙ্গল নয়, বিশ্বে এমন অনেক জায়গা আছে যা এখন পর্যন্ত রহস্যের জালে আটকে রয়েছে।