রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে চীন তার প্রস্তাবিত ৩ সূত্রের বাইরে কোনো কিছুই ভাবছে না। বেইজিং মনে করে এ সংকটের শিকড় অনেক গভীরে। এটার সমাধান রাতারাতি আসবে না। এ জন্য সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। বেইজিংয়ে সদ্য সমাপ্ত বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম (বিআরএফ)-এর আউটকাম জানাতে ঢাকায় গতকাল চীনা দূতাবাস আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন কাম মতবিনিময় অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জু এমনই ইঙ্গিত দেন। রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট-এর চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান পুঞ্জিভূত ওই সংকট সমাধানে চীন কিভাবে বাংলাদেশকে আরও সহযোগিতা করতে পারে সে সম্পর্কে জানতে চান। একই সঙ্গে সঙ্কট প্রলম্বিত হলে বিসিআইএম ইকোনমিক করিডোর বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটনার আশঙ্কা দেখেন কি-না? রাষ্ট্রদূতের কাছে সেটিও জানতে চান।
জবাবে রাষ্ট্রদূত জু বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধানে তারা তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েং ই অনেক আগেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের প্রতি অভিন্ন তিনটি প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন।
বেইজিং এ নিয়ে উভয় পক্ষকে উৎসাহিত করে চলেছে, যেন একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো যায়। চীনের প্রথম প্রস্তাবটি ছিল রাখাইনে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করে স্থিতিশীলতা-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে ও পালাতে বাধ্য না হয়। সবার চেষ্টায় এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল বাস্তুচ্যুতদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কার্যকর আলোচনা শুরু করা। সেটিও চলছে। তৃতীয় এবং চূড়ান্ত প্রস্তাব ছিল রাখাইনের অর্থনৈতিক উন্নতি। দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের লক্ষ্যে গোটা রাখাইন অঞ্চলের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। চীন এখন সেটাই করছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। তার মতে, রাখাইনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে পুঞ্জিভূত এ সঙ্কটের টেকসই সমাধান আসবে। এ সময় রাষ্ট্রদূত জু আরও বলেন, সত্যিকারের সমাধান নিহিত রয়েছে উন্নয়নের মধ্যে। চীন আশা করে, একটা ভাল সমাধান হবে। বিসিআইএম ইকনোমিক করিডোর বাস্তবায়ন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই উদ্যোগও সত্যিকারের সমাধান অর্থাৎ উন্নয়নের অংশ।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের মধ্যে নিরাপত্তা বিশ্লেষক, বিপস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) মুনিরুজ্জামান এবং সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন। বিআরএফ সম্মেলন নিয়ে তারা তাদের মূল্যায়ন তুলে ধরেন। ইফতার পূর্ব ওই সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত চীনের মেগা প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং সদ্য সমাপ্ত দ্বিতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের সফল বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেন। জানান, ২৫-২৭ এপ্রিল বেইজিংয়ের ওই সম্মেলনে বিশ্বের ৩৮ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ ৪০ জন শীর্ষ নেতা অংশ নিয়েছিলেন। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে দক্ষিণ এশিয়া থেকে প্রথম অংশ নেয়া রাষ্ট্রগুলোর অগ্রজ হচ্ছে বাংলাদেশ। বেইজিং সম্মেলনেও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।