ডিএমপি নিউজ: নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটিটিসি) সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা রুজু হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মোঃ ফখরুল ইসলাম, তার ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম, মোঃ সুরুজ্জামান, হাফেজ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোঃ দীন ইসলাম, ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত ৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গত শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি.) রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিজিটাল ফরেনসিক টিম ।
আজ শনিবার (২৮ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি.) বেলা ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম-বার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সক্রিয় সদস্য মোঃ ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকুরী করতেন। একই বছর কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচী শহরে গমন করেন। তিনি পাকিস্তান অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। মুফতি জাকির হোসেন পাকিস্তানের করাচি শহরে ইসলামীয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি মোঃ ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল ইসলাম জিহাদী ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যান। ফখরুল বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শিখেন। এ সময় কান্দাহারের শমসেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম একে-৪৭ সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় ৪ ঘণ্টা করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতেন। এই সময়ে তিনি আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদী প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর পুনরায় পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান ও প্রায় ৩ বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে আসেন। তিনি পরবর্তীতে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রম বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানসহ একাধিক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ নেতৃত্বশূণ্য হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তিনি সাংঠনিক কার্যক্রমে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমও ব্যবহার করেন। যেকোনো সময় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা চালানোর বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন। বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের বান্দরবানে পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ প্রদানের পরিকল্পনা করে। তিনি ও তার ছেলে আটককৃত মোঃ সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের তাদের সংগঠনে রিক্রুটের উদ্দেশ্যে এবং জিহাদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে মোটা অংকের টাকা অনুদান প্রদান করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত অপর আসামী হাফেজ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে টেলিগ্রাম গ্রুপ ’মোরা সত্যের সৈনিক’-এর এডমিন অস্থায়ী মুসাফির ছদ্মনামে গ্রুপটি পরিচালনা করে। এছাড়াও মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন গ্রুপের মাধ্যমে প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সাথে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান-প্রদান করেন। হুজির একটি এনক্রিপটেড অ্যাপে প্রাইভেট চ্যানেল “একটু প্রস্তুতির” কন্টেন্ট হিসেবে “একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে” শীর্ষক ১০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট এবং একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানোর বাংলা বিবরণসহ ভিডিও শেয়ার করে। আব্দুল্লাহ আল মামুন এনক্রিপটেড অ্যাপের চ্যানেল থেকে প্রাপ্ত কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দুই-একজনকে হাতে-কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশ্যে ও বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, তারা টেলিগ্রাম গ্রুপে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রেফতারকৃত ও তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পরস্পরের যোগসাজসে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন। তারা গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস আদান-প্রদান করতো। পলাতক অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।