ডিএমপি নিউজঃ শব্দ দূষণ ঢাকা মহানগরীর একটি বড় সমস্যা। এই শব্দ দূষণকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ আইন প্রয়োগসহ নানামুখী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গত এক বছরে ট্রাফিক বিভাগ শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রনে প্রায় ১০ হাজার হাইড্রলিক হর্ণ জব্দ করেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম এর উপস্থিতিতে আজ ১৬ আগস্ট’১৭ সকাল ১১ টায় ১০ হাজার হাইড্রলিক হর্ণ ধ্বংস করা হয়।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলা হয়- আমাদের দেশে সাধারণ হর্ণের তুলনায় অনেক গুন ক্ষমতা সম্পন্ন হাইড্রলিক হর্ণ যত্রতত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান জাতীয় গাড়ীতে এর বহুল ব্যবহার হয়। দিনের তুলনায় রাত্রে এর ব্যবহার বেশী। দিনের তুলনায় রাত্রে গাড়ী চালানোর বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে, যেমন-রাত্রে হেড লাইট ও ইন্ডিকেটর বেশী দৃশ্যমান হয়; রাস্তায় অযান্ত্রিক যান কম থাকে; পথচারী কম থাকে; সকল প্রকার গাড়ীও কম থাকে। রাত্রে এক গাড়ীর চালক আরেক গাড়ীর সাথে হেড লাইট, ইন্ডিকেটর লাইট, আয়না ইত্যাদি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক পথ চলতে ও ওভারটেক করতে পারে। হর্ণ বাজানোর খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না।
মহানগরী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের মধ্যে দিয়ে দিনে রাত্রে ভারী যানবাহন চলাচল করে। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের চারপাশে পর্যাপ্ত বাইপাস সড়ক তৈরি হয়নি। রাজধানী ঢাকা বাংলাদেশের কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় দূর পাল্লার অধিকাংশ গাড়ীকে ঢাকা শহর দিয়ে যেতে হয়। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তা ও মহাসড়কের পাশে অধিক হারে আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে।
রাতের বেলায় দূর পাল্লার ভারী যানবাহনগুলো শহর ও মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ীর নিজস্ব শব্দে ঘুমন্ত মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। রাস্তার পাশে অনেক হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গাড়ীর শব্দের সাথে যোগ হয় গগনবিদারী হাইড্রলিক হর্ণ। গভীর রাতে ঘুমন্ত নগর, শহরবাসীর হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে আঁতকে উঠার জন্য একটি হাইড্রলিক হর্ণের শব্দই যথেষ্ট। এমন হাইড্রলিক হর্ণ আছে যার শব্দ এক কিলোমিটার দূরে গিয়েও শব্দ দূষন করতে পারে।
হাইড্রলিক হর্ণ বাজানোর পিছনে ড্রাইভারদের অজ্ঞতা, অনিচ্ছা, হর্ণ না বাজানোর চর্চার অভাব, মালিকের নিয়ন্ত্রণহীনতা, যত্রতত্র হর্ণ কেনাবেচা ও লাগানো, গাড়ী চালানোর অসম প্রতিযোগিতা, হর্ণ না বাজিয়ে গাড়ী চালানো মানসিকতা গড়ে না ওঠা, গাড়ীর বিরুদ্ধে অভিযান কম হওয়া, শাস্তির পরিমান কম হওয়া, সর্তকতামূলক রোড সাইন কম থাকা, প্রশিক্ষনের ঘাটতি ইত্যাদি বিষয়গুলো কাজ করে বলে মনে হয়।
ঢাকা শহরে রাতের বেলায় চলাচলরত বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এর মত ভারী যানবাহন কর্তৃক হাইড্রলিক হর্ণ ব্যবহারের কারণে প্রায়শঃই সমাজের বিভিন্ন কর্ণার হতে অভিযোগ পাওয়া যায়। সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্টের পক্ষ হতে ও এ বিষয়ে অভিযোগ আসছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ হতে বিভিন্ন উপায়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পরও এখনও নিয়ন্ত্রণে আসে নাই।
উল্লেখিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি শব্দ দূষণমুক্ত নগরী প্রতিষ্ঠায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর। শব্দ দূষণকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক নিয়মিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে অভিযান। এ পর্যন্ত ১০ হাজার হাইড্রলিক হর্ণ জব্দ করা হয়। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এ লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সম্মানিত নগরবাসি, চালক, মালিক, হর্ণ বিক্রেতা, প্রস্তুতকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।