মানুষ যখন ঘামে তখন তার নিজস্ব গন্ধ ত্বকের ঘর্মগ্রন্থি ও তেলের মাধ্যমে নিঃসৃত হয়। এই গন্ধের সাথে ব্যাকটেরিয়ার সংমিশ্রণে যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় যাকে আমরা ঘামের গন্ধ বলে থাকি।
সামাজিক মেলামেশা আর আটপৌরে জীবনে সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো গায়ে গন্ধ হওয়া। জিন বা বংশগতির বাহক থেকে শুরু করে সস্তা সুগন্ধি, পেশাগত কাজের ধরনসহ নানা কারণকেই আমরা শরীরে দুর্গন্ধ হওয়ার জন্য দায়ী করে থাকি। কিন্তু প্রতিদিন আমরা যেসব খাবার খাচ্ছি তাতেই লুকিয়ে রয়েছে শরীরে বাজে গন্ধ সৃষ্টির কারণ।
আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এ পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকলে এ জাতীয় খাবারের বিষয়ে সতর্ক হন। তাহলে আসুন জেনে নেই কোন কোন খাবার গায়ের গন্ধ ছড়ানোর জন্য দায়ী।
মসলা জতীয় খাবারঃ বেশি পরিমাণে মসলাজাতীয় খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরে অতিরিক্ত ‘সালফার’ বা গন্ধক সৃষ্টি হতে পারে। এ গন্ধক আপনার ত্বকের লোমকূপ এবং নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে আসবে। খেয়াল রাখুন খাবারে যেন অতিরিক্ত পেঁয়াজ, রসুন বা ঝাল না থাকে।
লাল মাংসঃ লাল মাংস বা গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংস হজম করতে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি খরচ হয়। এসব খাবার বেশি পরিমাণে খেলে শরীর গরম হয়ে ওঠে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘাম হয়। এ থেকেও শরীরে গন্ধ হতে পারে। নিরামিষভোজীদের ক্ষেত্রেও বেশি পরিমাণে মেথি বা এমন তীব্র গন্ধযুক্ত লতা-পাতা খেলেও এমন হতে পারে।
পানীয় ও চকলেটঃ বেশি বেশি চকলেট খেলে বা অতিরিক্ত চা, কফি, সোডা ও অ্যালকোহল পান করা থেকেও গায়ে গন্ধ হতে পারে। পানীয় বেশি খেলে এর কমপক্ষে ১০ ভাগ ঠিকমতো পরিপাক হয় না এবং তা থেকে শরীরে হালকা ঘাম হতে পারে। বিশেষত বেশি অ্যালকোহল পানে শরীরে গন্ধ হয়।
জাঙ্কফুডঃ নিয়মিত জাঙ্কফুড বা নানা রকমের ভাজা-পোড়া হাবিজাবি খাবারে অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকলে মেদ-চর্বি জমে। যা ঘাম এবং শরীরে গন্ধের অন্যতম কারণ। এসব খাবার থেকে বাজে গন্ধের ঢেকুরও আসতে পারে। আর বেশি মাত্রায় পোড়া তেল, চিনি, ময়দা বা লবণযুক্ত খাবার খেলেও এমন হতে পারে।
শর্করা কম খেলেঃ খাবারে শরীরের চাহিদার চেয়ে শর্করা কম হয়ে গেলে ঘাম হতে পারে। এ থেকে রক্তকণিকায় ‘কিটোনস’ নামের একটি রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে যা থেকে গায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত গন্ধ হতে পারে।
দুগ্ধজাত খাবারঃ দুগ্ধজাত খাবারে বেশ প্রোটিন থাকে এবং অতিমাত্রায় এসব খাবার খেলে তা পরিপাকে বেশ সময় লাগে। বেশি মাত্রায় এসব খাবার খেলে শরীরে ‘হাইড্রোজেন সালফাইড’ এবং ‘মিথাইল মারকাপ্টান’ নির্গত হয়, যা থেকে গায়ে বাজে গন্ধ হতে পারে।
তামাক খেলেঃ আমরা সবাই এটা জানি সিগারেটের ধোঁয়া শরীরের ঘাম গ্রন্থীগুলোর সঙ্গে মিলে বিশেষ একটা ‘ধূমপায়ী গন্ধ’ তৈরি করে। আর এটা মাথার চুল থেকে শুরু করে কাপড়-চোপড় সব খানেই জড়িয়ে থাকে। তাই গায়ে গন্ধ এড়াতে ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।