সে ‘ছুঁতে’ পারে তার হৃদপিণ্ডকে। ‘স্পর্শ’ করে হৃদয়ের ধুকপুকানি। বাইরে থেকে দেখতে পায় কেমন করে প্রতি মিনিটে, প্রতি সেকেন্ডে ওঠা নামা করছে ছোট্ট হৃদয়টি। কারণ এমনই জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম হয়েছে এই খুদের। জন্ম থেকেই শরীরের বাইরে ধুকপুক করছে তাঁর হৃদপিণ্ডটি।
সাত বছরের এই রাশিয়ান মেয়ের নাম বীরসাভিয়া গোনচারোভা। বিরলের থেকেও বিরলতম থোরাকো অ্যাবডোমিনাল সিন্ড্রোমে আক্রান্ত সে। এই রোগকে আবার প্যান্টালগি অব ক্যান্ট্রেলও বলা হয়। এক কোটি লোকের মধ্যে মাত্র পাঁচ জন এই রোগের শিকার হন।
বীরসাভিয়ার মা ডারি যখন গর্ভবতী, তখন চিকিৎসকরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, হয়তো বাঁচানো যাবে না গর্ভস্থ সন্তানকে।
কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান ছাড়েননি বীরসাভিয়ার বাবা–মা। ডারি জানালেন, যখন প্রথম ওর হার্ট বিট শুরু হল, তখন খুব স্পেশাল লেগেছিল। বুঝলাম ও বেঁচে আছে। ও নিশ্বাস নিচ্ছে।
জন্মের পর থেকেই এই রোগের শিকার সে। এক সময় বেঁচে থাকাটাই ছিল বীরসাভিয়ার কাছে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আজ সাত বছর পরেও দিব্যি হেসে–খেলে বেড়াচ্ছে সে। বিবিসি–কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বীরসাভিয়া নিজেই জানায়, ‘‘আমি খেলি, হাঁটি, লাফাই, উড়ি। যা খুশি করি। তবে দৌড়তে পারি না। আমি দৌড়তে চাই।’’
তবে কী সম্পূর্ণ সুস্থ বীরসাভিয়া? মা ডারি জানালেন, প্রথমে তাঁকে বলা হয়েছিল, জন্মের পর বেশি ক্ষণ বাঁচবে না বীরসাভিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের জেরে সে বেঁচে গেলেও খুবই সাবধানে চলাফেরা করতে হয় তাকে। কারণ বীরসাভিয়ার হৃদপিণ্ড বাইরের দিকে অনেকটা বেরনো। আর খুব নরম একটা চামড়ার আচ্ছাদনে ঢাকা।
তবে বীরসাভিয়া চায় সকলের মতোই দৌড়ে বেড়াতে। বীরসাভিয়ার এই ইচ্ছে পূরণ করতেই এ বার উঠে পড়ে লেগেছে তার পরিবার। জটিল অস্ত্রোপচার করা হবে খুদের দেহে। চেষ্টা করা হবে তার হৃদপিণ্ডটি যথাস্থানে বসানোর। এবং তাকে যত দ্রুত সম্ভব সুস্থ করে তোলার।
সম্প্রতি আমেরিকায় নিয়ে আসা হয়েছে বীরসাভিয়াকে। বস্টনের চিলড্রেন্স হসপিটালে হবে তাঁর অস্ত্রোপচার। এই মুহূর্তে চলছে সেই প্রস্তুতি। বীরসাভিয়ার রক্তচাপ বেশ খানিকটা বেশি। সে জন্যই গত দু’বছর ধরে অনেক চেষ্টা চালিয়েও করা যায়নি অস্ত্রোপচার। এখন ফের চেষ্টা চলছে তার রক্তচাপ স্বাভাবিক স্তরে নামিয়ে আনার। এরপরেই হবে অস্ত্রোপচার।-আনন্দবাজার