ডিএমপি নিউজঃ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ১৯৪৮ সালের ৪ মার্চ বি-বাড়ীয়া জেলার নবীনগর থানার নোয়াগ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি শৈশবে নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। অতঃপর শ্যামগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন বলে জানা যায়। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া শেষে যখন তিনি পিতার সাথে গৃহস্থালি কাজে মনোনিবেশ করেছেন, তখন পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে বাঙালিদের পাকিস্তান বিরোধী কর্মসূচি এবং নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু হয়। কিশোর বয়সে তিনি স্বধীনচেতনা ও গান পাগল ছিলেন।
১৯৬৯ সালের শেষের দিকে আব্দুল মান্নান নিজেও বড়ভাই সেনাসদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তৎকালীন পাকিস্তান পুলিশে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে তিনি সরদা পুলিশ ট্রেনিং কলেজে মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তার বদলী হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার গুইমারা পুলিশ ইউনিটে। সেখানে চাকরি অবস্থায় মা-বাবার পছন্দে নিজ এলাকায় শহীদ আব্দুল মান্নানের বিয়ে ঠিক হয়। ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে আব্দুল মান্নানের বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত তিনি অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় বিয়ের তারিখ পিছিয়ে যায়। আব্দুল মান্নন সুস্থ হতে না হতেই পাকিস্তান শাসকের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি সোচ্চার হয়। দেশে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে, আর বাড়ি ফেরা হলো না শহীদ আব্দুল মান্নানের। তিনি চট্টগ্রাম ১ নং সেক্টরের অধীন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
সম্মুখযুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার কোনো জুড়ি ছিল না। ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রাম (বর্তমান চট্টগ্রাম) জেলার রাউজান থানার মদিনাঘাট নামক স্থানে পাক বাহিনীর সাথে এক ভয়াবহ সম্মুখযুদ্ধে তিনি আহত হন। আহতাবস্থায় তাঁকে চিকিৎসার জন্য অপর মুক্তিযোদ্ধা রাউজানের ডাক্তার পরেশ বড়ুয়ার বাড়িতে নেওয়া হয়।পরেশ বড়ুয়ার বাড়িতে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান শহীদ হন। ডাক্তার পরেশ বড়ুয়ার বাড়িতেই এই বীর শহীদকে দাফন করা হয়। (বীর আব্দুল মান্নানের কবর আজো ডাক্তার পরেশ বড়ুয়ার বাড়িতে আছে)। এই জাতীয় বীরকে বাঙালি জাতি বীর বিক্রম উপাধী দিয়ে চিরদিন অমর করে রেখেছে (গেজেট-১৩৬ প্রতিরক্ষা গেজেট নং-৮/২৫ডি-১/৭২-১৩৭৮ তারিখ ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৭৩)।
দেশ স্বাধীনের পর শহীদ আব্দুল মান্নানের সহযোদ্ধাদের কাছে তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই বীরের বীরত্বগাথা সম্পর্কে অবগত হন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর তার ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেনকে ফিরে পেলেও বীর শহীদ আব্দুল মান্নান (বীর বিক্রম)-এর কোনো খোঁজ পরিবারের সদস্যরা পাননি।