কার্ডিফের বাইশ গজে এর আগে পাঁচটি ম্যাচের সবক’টিতেই হার স্বীকার করতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। দ্বাদশ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর সেই কার্ডিফে আফগানদের বিরুদ্ধেও মঙ্গলবার দ্বীপ রাষ্ট্রের শুরুটা ভালো হয়নি। তবে বোলারদের দাপুটে পারফরম্যান্সে দিনের শেষে মাথা উঁচু করেই মাঠ ছাড়ল শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৩৪ রানে পরাজিত করল তাঁরা। চার উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা শ্রীলঙ্কা পেসার নুয়ান প্রদীপ। যার সামনে ফিকে হয়ে গেল আফগান স্পিনার মহম্মদ নবির ৪ উইকেট।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে এদিন প্রথমে ব্যাট করে আফগান বোলারদের সামনে করুণ আত্মসমর্পণ করেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। ৩৬.৫ ওভারে বিপক্ষকে ২০১ রানে গুটিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপে ঐতিহাসিক জয়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনছিল আফগানরা। কিন্তু পালটা শ্রীলঙ্কার বোলারদের কাছে আফগানদের করুন আত্মসমর্পণে তা বাস্তব রূপ পেল না।
সোফিয়া গার্ডেনে এদিন টস জিতে দ্বীপ রাষ্ট্রকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব। কিন্তু কুশল পেরেরা ছাড়া নবি-জাদরানদের সামনে এদিন ফিকে ‘৯৬-র বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ব্যাটিং লাইন-আপ। যদিও ওপেনিং জুটিতে ৯২ রান ওঠার পর দলের এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স আশা করেননি অতি বড় সিংহলী সমর্থকও। ৩০ রানে অধিনায়ক করুণারত্নের প্রথম উইকেটটি হারায় শ্রীলঙ্কা। ১৪তম ওভারের প্রথম বলেই করুণারত্নেকে আউট করেন মহম্মদ নবি৷ আউট হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক ৪৫ বলে ৩০ রান করেন।
থিরিমানেকে সঙ্গে নিয়ে পেরেরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন বটে। তবে ২২ তম ওভারে মহম্মদ নবি তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কা শিবিরে মোক্ষম আঘাত হানেন। তিনি ফিরিয়ে দেন থিরিমানে (২৫), কুশল মেন্ডিস (০) ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজকে (০)। ধনঞ্জয়া ডি’সিলভা খাতা খোলার আগেই উইকেট দেন হামিদ হাসানকে। থিসারা পেরেরা আত্মহত্যার ঢংয়ে ২ রান করে রানআউট হন৷ উদানা ১০ রান করে দাওলত জাদরানের বলে বোল্ড হন।
কুশল পেরেরার মূল্যবান উইকেটটি তুলে নেন রশিদ খান। সাজঘরে ফেরার আগে পেরেরা ৮টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৮১ বলে ৭৮ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন। পেরেরা আউট হওয়ার পরেই বৃষ্টিতে খেলা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৩৩ ওভারে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ১৮২ রান। বৃষ্টির পর পুনরায় খেলা শুরু হলে ৩.৫ ওভারে ১৯ রান যোগ করে সাজঘরে ফিরে যান বাকি দুই শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান। মহম্মদ নবি ৯ ওভারে ৩০ রানের বিনিময়ে ৪টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট নেন পেসার দৌলত জাদরান ও রশিদ খান। ১টি উইকেট পান হামিদ হাসান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৩৪ রানে প্রথম উইকেটের পতন হয় আফগানিস্তানের। ওপেনার মহম্মদ শেহজাদকে ফিরিয়ে আফগান শিবিরে প্রথম ধাক্কাটা দেন মালিঙ্গা। এরপর একে একে উদানা, প্রদীপদের ভয়ঙ্কর স্পেলে নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট খোয়াতে থাকে আফগানিস্তান। ৫৭ রান ৫ উইকেট খোয়ানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক নাইব ও জাদরান জুটি। ষষ্ঠ উইকেটে এই দুই ব্যাটসম্যান ৬৪ রানের অবদান রাখলেও তা জয়ের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। নাইব ফেরেন ২৩ রানে। সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন নাজিবুল্লাহ জাদরান।
করুণারত্নের দুরন্ত থ্রোয়ে নাজিবুল্লাহ ফিরতেই যবনিকা নেমে আসে আফগান ব্যাটিং লাইন আপে। ৩২.৪ ওভারে মাত্র ১৫২ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান ইনিংস। ৪ উইকেট নিয়ে আফগান শিবিরের কোমর ভেঙে দেন প্রদীপ। পাশাপাশি ৩ উইকেট নিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন মালিঙ্গাও। ১টি করে উইকেট নেন ইশুরু উদানা ও থিসারা পেরেরা। সবমিলিয়ে কাঙ্খিত জয় থেকে ৩৪ রান দূরেই থেমে যেতে হয় আফগানদের।