পবিত্রতা ও বিশুদ্ধ্বতার মাস রমজান। হিজরী সনের নবম মাস এটি। ফারসি ভাষায় বলা হয়ে থাকে রোজা। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় মাসব্যাপী সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর মানুষ সিয়াম সাধনা করেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত না খেয়ে, আল্লাহর দেখানো পথে চলেন এবং ইবাদতের মাধ্যমে রোজাদারগণ রোজা পালন করে থাকেন। আল্লাহর রহমত লাভ করে পূর্ববর্তী সকল গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য এবং নিজেকে আরো বেশী পূণ্যবান করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন। অন্য যেকোন মাস থেকে রমজান অনেক বেশী তাৎপর্যপূর্ণ। আল হাদিসে বলা আছে ,” রমজান জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল” । এ মাসেই নাযিল হয়েছে পবিত্র কোরআন। মানবজাতিকে পূণ্য, মানবিকতা,ঈমানের পথে পরিচালিত করার জন্য এই কোরআন যুগে যুগে পথ দেখিয়েছে বিপদ্গামীদের।
রমজান মাসের বিশেষ আমল হলো নিজেকে সকল প্রকার কু রিপু থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আল্লাহর দেখিয়ে দেয়া জীবন পদ্ধতিতে সংযত জীবনযাপন করা। নিজের চোখ, জিহ্বা, কান, মুখ, কামনা সবকিছু সংযত করে রেখে রোজা পালন করতে হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা শুধু না খেয়ে নয়, বরং অন্যান্য সৎ গুণাবলীর চর্চা করা করা রমজানের মহাত্ব্য। রাসুল (সঃ) বলেছেন ,” সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে যে ব্যাক্তি রোজা রাখবে তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে”(বুখারী ও মুসলিম)।
প্রতিটি মুসলিমের জীবনে রমজান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ চান মানুষ যেন তাঁর ইবাদত করে, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলে। সমাজের অন্ধকার দূর করে আলোর পথের যাত্রা আল্লাহর নির্দেশিত পথে রয়েছে। রমজান মাস মানুষকে ত্যাগ, সততা, সংযম,উদারতা, পূন্যবান হবার অনুপ্রেরণা ও দিক নির্দেশনা দেয়। জীবন ও আখিরাতের সুখ সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহ মুসলিমদের জন্য অনেক সুযোগ দিয়ে রেখেছেন। তার মধ্যে রমজান মাস অন্যতম।
এই রমজানেই নাযিল হয়েছে আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমত, মানবজাতির জন্য জন্য সর্বোত্তম আশীর্বাদ আল কোরআন। আল্লাহতায়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই আমি কদরের রাতে কোরআন নাযিল করেছি। কদরের রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।সে রাতে জিব্রাঈল (আঃ) সহ তাদের রবের নির্দেশে অনুমতিক্রমে সব বিষয়ে শান্তির ফয়সালা নিয়ে আসেন, উদয় পর্যন্ত(সূরা কদর,আয়াত ১-৫) ।“ বিশ রোজার পর থেকে যেকোন বিজোড় রাত হলো কদরের রাত। কিন্তু মতান্তরে সাতাশ রমজানের রাত ই হলো শবে কদরের রাত। এছাড়া মানুষের পথ প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন ওহী, সহিফা, আসমানি কিতাব নাযিল হয়েছে এই রমজান মাসেই।
রমজানের ইবাদত অন্য যেকোন মাস থেকে বেশী সওয়াব অর্জন করে। ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ রোজা। কোরআনে আছে, রমজান মাসে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে। মুমিনদের জন্য আল্লাহ তার আশীর্বাদের দরজা খুলে রাখেন। রোজা রাখা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয় ইবাদাত। আল্লাহ তায়ালা বলেন , “ হে মুমিনগণ তোমাদের প্রতি রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি” (সূরা বাকারাঃ আয়াত ১৮)। একজন প্রকৃত রোজাদার কখনো খারাপ কাজ করতে পারেনা অন্যায় পথে চলতে পারেনা। সবাই যদি রমজানের আদর্শ সর্বদা মেনে চলত তাহলে সমাজে শান্তি বিরাজ করতো।
রমজানে নিজের ইবাদতের প্রতি বেশি মনোনিবেশ করতে হবে, শুধু রোজা রাখা নয়, তার সাথে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পরা,কোরআন তেলাওয়াত করা, দান খয়রাত করা, ফিতরা দেয়া, অসাধু যেকোন কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা, গরিব দুঃখী, মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সবার সাথে ভাল মার্জিত ব্যবহার করা, সকল খারাপ মনোভাবকে মাটি চাপা দিয়ে শুধু আল্লাহর অনুগ্রহ ও নিয়ামত প্রার্থনা করতে হবে। অর্থ বুঝে ভালভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। সে আলোকে নিজের জীবন পরিচালিত করতে হবে। এভাবেই একজন সৎ ঈমানদার মুসল্লি হিসেবে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যাবে। আখিরাতেও আল্লাহ তার জন্য সম্মানীয় স্থান নির্ধারন করে রাখবেন। আল হাদিসে বলা আছে, “রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবার ঢাল”।
কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা রোজা এলেই বেশী মুনাফা অর্জন করে ব্যবসায় লাভবান হতে চান। জিনিসপত্র মজুদ রেখে দাম বারিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারন হয়ে দাঁড়ান। তবে এই ধরনের কাজের জন্য আল্লাহ কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। হাদিসে উল্ল্যেখ আছে, “ পণ্যদ্রব্য মজুদ রেখে অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী।“
সবধরনের খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখে সবার উপকার করলে আল্লাহ তার ফলাফল অবশ্যই দিবেন। কাজী নজরুল বলেছেন, “নামাজ পড়, রোজা রাখ, কলমা পড়ো ভাই, তোর আখেরের কাজ করে নে সময় যে আর নাই।“তাই নিজের লোভ লালসা, ঘৃণা, অহংকার, প্রতিহিংসা, কঠোর মনোভাব বর্জন করে ধর্মের আলোকে জীবন গড়ে তোলা উচিৎ। রমজানের এক মাস মানুষকে আরো বেশী মানবিক, বিবেকবান, ধৈর্যশীল ও সংযমী হতে শেখায়। নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা রেখে সকল ধর্মকে গুরুত্ব দেয়া মানবিকতার মধ্যে পড়ে। জীবজন্তু থেকে শুরু করে সকল প্রাণীকুলের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করা মানবিকতার লক্ষণ। হিংসা বিদ্বেষ ও অন্যের অনিষ্টকারীকে আল্লাহ ও ভালবাসেন না। নিজের ঈমানকে আরো দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে, পবিত্রতা ও শান্তির ধর্ম ইসলামকে যথাযথভাবে জেনে ,বুঝে,চর্চা করে বিশ্বের দরবারে এর মহানুভবতা তুলে ধরাই হোক এবারের রমজানের উদ্দেশ্য।
তথ্যসূত্রঃ প্রতিচ্ছবি.কম