ডিএমপি নিউজঃ সংসদের ভেতরেই এবার নামাযের ব্যবস্থা করে দিয়ে মুসলমানদের আরো আপন করে নিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। ১৯ মার্চ,২০২০ নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন দরদি মানবতার আরেক চেহারাও দেখল বিশ্ব। গত ১৫ মার্চের নৃশংসতার স্মরণে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী মুসলিম ছাড়াও অন্য বিশ্বাসের অনুসারিদের সংসদে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা নিজ ধর্মের বেশে সংসদে প্রবেশ করেন। শুধু তাই নয়, এ অধিবেশনে জাসিন্ডা তার বক্তব্য আরবিতেই শুরু করেন, ‘আসসালামু আলাইকুম (অর্থ: আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)’ বলে।
পরে প্রথমে মুসলিমদের জন্য সংসদে নামাযের ব্যবস্থা করে দেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন। এরপর বাকি ধর্মের অনুসারিরাও প্রার্থনা করেন। বক্তব্যের সময় তিনি একটি বারের জন্যও দুটি মসজিদে হামলাকারী বন্দুকধারীর নাম উচ্চারণ করেননি। স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীর কোনো নাম নেই, ধর্ম নেই, সে সন্ত্রাসীই। নিউ জিল্যান্ডের যে আইনি শক্তি আছে, তার সর্বোচ্চটিরই মুখোমুখি হতে হবে হামলাকারীকে ।
প্রধানমন্ত্রী কিউইদের কাছে ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসিজদে হামলায় নিহত ৫০ ও ৪৮ জন আহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে হতাহতদের স্বজনদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন। হামলাকারী ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ব্রেনটন টারান্টকে উদ্দেশ্য করে কিউই প্রধানমন্ত্রী সংসদকে বলেন, ‘তিনি (টারান্ট) সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে অনেক কিছু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি কুখ্যাত। এজন্য আপনারা কখনই আমার মুখে তার নাম শুনবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের অনুরোধ করব, যারা চলে গেছেন আমরা বরং তাদের নাম নেই ওই খুনির নাম নেয়ার চেয়ে। তাকে নিয়ে যখন আমি কথা বলব, তিনি নামবিহীন থাকবেন।’
এ সময় জেসিন্ডা ওই হামলার ভিডিও শেয়ার করা বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও কাজ করার আহ্বান জানান। সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের আইন অনুযায়ী হামলাকারী পূর্ণ শাস্তির মুখোমুখি হবেন।’
৩৮ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী পরিচিত শোকের কালো পোশাক পরে সংসদে আসেন। তিনি বক্তব্য শেষ করেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু (অর্থ: আপনার উপরও শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)’ বলে।
এরপর প্রধানমন্ত্রী উঠে গিয়ে সংসদে আসা মুসলিমদের সঙ্গে গত ১৫ মার্চ মসজিদে হতাহতের ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ করেন। মুসলিম নারীদের বুকে টেনে নেন। স্পিকার ট্রেভর মালার্ড বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসীদের এই বিশেষ অধিবেশনে আমন্ত্রণ জানান। তারা নিজ নিজ ধর্মীয় পোশাকে সংসদে এসে পরে প্রার্থনাও করেন। কিন্তু, সর্বপ্রথম মুসলিমদের নামায আদায় করতে দেয়া হয়। পরে অন্য ধর্মের অনুসারিরা তাদের প্রার্থনা করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ জুমার নামাযের সময় ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর ও লিনউড মসজিদে বন্দুকধারী নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে পাঁচ বাংলাদেশিসহ ৫০ জন নিহত ও ৪৮ জন আহন হন।