জন্মের পর থেকেই সন্তান কিভাবে নিরাপদে থাকবে তা নিয়ে মা-বাবার চিন্তার বিষয়। বাচ্চা বয়সে ঠান্ডা লেগে যাবে না তো? পড়ে গেলে ব্যথা লাগে যদি! এই ধরনের চিন্তা থেকে শুরু করে স্কুলে কেউ ওকে মারবে না তো? রাস্তা পার হওয়ার সময়ে… ভেবে আঁতকে ওঠে মায়ের দুর্বল মন।
কিন্তু প্রতি মুহূর্তে দুশ্চিন্তা না করে তার চেয়ে বরং ধাপে ধাপে সন্তানকে তৈরি করুন, যাতে সে নিজেই তার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে। কৌশলগুলো আসুন জেনে নেই-
রাস্তাঘাটে
রাস্তা পার হওয়ার সময়ে সন্তানের (তিন বছরের কম) হাত ধরে থাকুন বা কোলে তুলে নিন। দশ বছরের ছোট সন্তানদের অবশ্যই হাত ধরে রাস্তা পার করানো উচিত। আর রাস্তা পার হওয়ার সময়ে সন্তানকে নিরাপদ দিকে রাখুন। অর্থাৎ যে দিক থেকে গাড়ি আসছে, সন্তানকে রাখতে হবে তার বিপরীত দিকে।
জ়েব্রা ক্রসিং ধরে বরাবরই রাস্তা পার হবেন। সন্তানকে ছোট থেকেই তা দেখিয়ে রাখুন। তা হলে তার মধ্যেও জ়েব্রা ক্রসিং ধরে রাস্তা পার হওয়ার সচেতনতা তৈরি হবে।
সিগন্যাল দেখে রাস্তা পার হন। সে সময়ে সন্তানকেও সিগন্যাল দেখতে শেখান। সিগন্যালের লাল, সবুজ আলো কী সংকেত দেয়, তা বোঝান। কখনও রাস্তা পার হওয়ার সময়ে আপনার সন্তানকেই জিজ্ঞেস করুন, রাস্তা পার হওয়ার সিগন্যাল হয়েছে কি না। তা হলে তাকে পরখ করাও হয়ে যাবে।
চেনা–অচেনা
মনে রাখবেন, বয়সে ছোট হলেও ভাল-খারাপ সম্পর্কে একটা ধারণা তাদের মধ্যেও থাকে। তাই আপনার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনের কাছে যদি আপনার সন্তান যেতে না চায়, তার কথা শুনুন। বোঝার চেষ্টা করুন, সে কেন সেই মানুষটির কাছে যাচ্ছে না।
আপনার সন্তানকে কেউ খেলনা দিলেই তা নিয়ে খেলতে দেবেন না। দেখে নিন, তাতে কোনও ছোট ব্লক বা ছোট কিছু আছে কি না। ছোট বাচ্চাদের সব কিছু মুখে দেওয়ার অভ্যাস থাকে। ফলে তারা ছোট খেলনা গিলে ফেলতেও পারে।
প্রতিবেশী বা বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে সন্তানকে রেখে কোথাও যেতে হলেও সাবধান হন। যাদের কাছে বাচ্চাকে রাখবেন, তারা কেমন মানুষ সেটা আগে যাচাই করে নিন।
নতুন স্কুলে ভর্তি করলে তার বন্ধুদের পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ানো প্রয়োজন। বাচ্চার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কেও তাকে জানিয়ে রাখুন। সন্তানের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমস্যা হলে তা যেন জানাতে পারে। তাই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশুন।
অচেনা মানুষের কাছ থেকে খাবার নিতে নিষেধ করতে হবে। সে খাবার নিলেও যেন না খায়। বাড়িতে এসে আপনার উপস্থিতিতেই যেন সে তা খায়। একই সঙ্গে প্রতিবেশী বা বন্ধুদের বাড়িতে গেলে আপনার সন্তান কোন খাবার খাবে, সে বিষয়ে সচেতন থাকুন।
অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে কী ভাবে কথা বলবে, তা শেখাতে হবে। অচেনা কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে তার উত্তরে কতটা বলবে, সেটাও শেখাতে হবে।
নিজের বাড়িতে
আপনার ছোট শিশু কি বাড়িতে সম্পূর্ণ নিরাপদ? তাই বাচ্চার উপরে নজর রাখা দরকার। খুব ছোট বাচ্চা হলে চব্বিশ ঘণ্টাই তাকে চোখে চোখে রাখুন। প্রয়োজনে তাকে দেখাশোনা করার জন্য কাউকে রাখতে পারেন।
খাট থেকে ছোট বাচ্চা পড়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রত্যেক মা-বাবাই হয়তো এ রকম দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। তাই বাচ্চাকে নিচু জায়গায় রাখার চেষ্টা করুন। খাটের পাশে ছোট বসার জায়গা টেনে এনে রাখতে পারেন। বাজারে খাটের গার্ডও কিনতে পাওয়া যায়। অন্ধকারে বাচ্চা ঘুমোলে তার পাশে মোবাইল অন করে কাজ করবেন না।
ঘরের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করে খেলতে গিয়েও বাচ্চারা ব্যথা পেতে পারে। বিশেষ করে টেবিল বা চেয়ারের কোণে ধাক্কা লেগে মাথা কেটে যেতে পারে। তাই রাবার গার্ড দিয়ে তা ঢেকে রাখতে পারেন।
বিপদে পড়লে
সন্তান নিরাপদে থাকুক সেটাই সবার কাম্য। কিন্তু বাচ্চা বিপদে পড়লে কী করে বিপদ হতে মুক্ত হবে, সেই পথও আপনাকে দেখাতে হবে। বাচ্চাকে থানার (পুলিশ স্টেশন) নাম্বার ও আপনার ফোন নাম্বার মুখস্থ করিয়ে রাখুন। বিপদে পড়লে সে নিজেই ফোন করতে পারবে। অথবা অন্য কাউকে দিয়েও ফোন করাতে পারবে।
খেলাধুলোর সময়ে
বাচ্চাদের একসঙ্গে খেলতে তো দিতেই হবে। সে পড়ে চোট পেলেও তাকে আটকাবেন না। বরং সে কোথায় খেলছে, সেই জায়গাটা আপনি পছন্দ করে দিতে পারেন। কংক্রিটের উপরে না খেলে মাঠে খেলাই নিরাপদ। তা হলে পড়ে গেলে ব্যথা কম লাগবে।
এমন কিছু নিয়ে খেলতে দেবেন না, যাতে আঘাত লাগতে পারে। বয়স অনুযায়ী বাচ্চার খেলার ধরন ও খেলনাও আলাদা। তাই সমবয়সের বাচ্চাদের সঙ্গেই সন্তানকে খেলতে দিন।
ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা চললে তার পাশেই আপনার ছোট বাচ্চাকে খেলতে ছাড়বেন না। ক্রিকেট বা ফুটবলের বল এসে মাথায় লাগতে পারে। একে সেই বল ভারী ও গতিসম্পন্ন। সেই আঘাত কিন্তু প্রাণঘাতীও হতে পারে।
সন্তান প্রত্যেক পিতা-মাতার কাছে অত্যন্ত আদরের। নিজের সন্তানের কখন কি প্রয়োজন এটা পিতা-মাতার চেয়ে ভালো আর কেউই জানে না। সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সেই সাথে তার চলার পথে প্রয়োজনীয় সকল পরামর্শ দিয়ে যান। তাহলে আপনার সন্তান শুধু নিরাপদেই থাকবে না, খুঁজে পাবে সঠিক দিক নির্দেশনাও।