ডিএমপি নিউজঃ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেছেন, বাংলাদেশের মাটি কোন সন্ত্রাসীর ঘাঁটি হবে না, সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
আজ (৩০ নভেম্বর) শনিবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট হলে আয়োজিত সন্ত্রাসবাদ: আইন ও বাস্তবতা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ও বাংলাদেশ আইন সমিতি যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে।
অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কেননা তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা, নিরলস পরিশ্রম ও কঠোর মনিটরিং এবং ভিজিলেন্সের কারণে আমরা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে নিরাপদে বসবাস করে যাচ্ছি। তাদের নিরলস পরিশ্রম ও কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত থাকুক এবং আর যেন কোন সন্ত্রাসী ঘটনা বাংলাদেশে না হয় সেজন্য আমরা সকলে সচেতন থাকি।
তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এর থেকে আমরা কেউ নিরাপদ নই। প্রতিদিন বিশ্বের কোথাও না কোথাও সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে। এই সন্ত্রাসবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে বিশ্ব কাজ করছে। অপরাধ করে যে আপনি আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারবেন না তা নিশ্চিত করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।সকলের ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে। সন্ত্রাসবাদ দমনে পরিবারের ভূমিকা অনেক বড়। আপনার সন্তান ঘরে ও বাহিরে কি করছে সেবিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। সমাজিক সকল স্তরের মানুষকে সন্ত্রাস বিরোধী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। বাংলাদেশের মাটি কোন সন্ত্রাসীর ঘাঁটি হবে না। সন্ত্রাসীদের কোন দেশ, জাতি ও ধর্ম নেই, সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসীই।
সুপ্রীম কোটের আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ কেমনভাবে চলবে তা ১৯৭১ সালে সেটেল হয়ে গেছে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তারা সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত হয়। সন্ত্রাসীরা নিজেদের আলেম দাবি না করলেও ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ চালাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মোঃ রহমত উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাসবাদ। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে যেভাবে কাজ করছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সন্ত্রাসবাদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। এই সমস্যা হতে নিজেদের ও দেশকে রক্ষা করতে হলে সকলকে মিলে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে আইনের শাসন ও মানবাধিকার সংরক্ষণের প্রতি লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ দেশ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন দেশে প্রচলিত সন্ত্রাস বিরোধী বেস্ট প্রাকটিসেস পর্যালোচনা করে দেখা যায় তারা মূলত চারটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পদক্ষেপগুলো হচ্ছে- প্রিভেনটিভ রেডিকালাইজেশন, কাউন্টারি রেডিকালাইজেশন, কাউন্টার টেরোরিজম ও ডিরেডিকালাইজেশন। এলক্ষ্য পূরণে বিভিন্ন এপ্রোচ করা হয় তারমধ্যে আইন প্রয়োগ, কমিউনিটি এপ্রোচ, টার্গেটেড এপ্রোচ, হস্থক্ষেপমূলক এপ্রোচ, ইনফোর্সমেন্ট এপ্রোচ ও ডিরেডিকালাইজেশন এপ্রোচ অন্যতম।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ পুরোপুরি দমন করা সম্ভব না। এর জন্য প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলা।সন্ত্রাসবাদ সভ্যতা, মানবতা ও ধর্মের প্রধান শত্রু। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারকদের হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুপ্রীম কোটের বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি খিজির হায়াত, বিচারপতি মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ আইন সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম আফজাল উল মুনীর। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন দায়রা জজ, আইনজীবী, ঊর্ধ্ব ঢাবি’র আইন অনুষদের শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ অনেকে। সেমিনারটির সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।