ডিএমপি নিউজঃ ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশী কূটনীতিকদের সাথে এক নিরাপত্তা সমন্বয় সভায় ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম(বার) বলেন, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ বৈশ্বিক সমস্যা এবং শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য হুমকি স্বরূপ। সন্ত্রাসবাদ কোনো ধর্ম, জাতি, বিশ্বাস, সংস্কৃতি, নৃগোষ্ঠী বা সমাজের সাথে যুক্ত হতে পারে না এবং তা হওয়া উচিৎ ও নয়। সন্ত্রাসবাদ মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ। বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে।
রবিবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগের উদ্যোগে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম(বার) ও ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কনসাল জেনারেলগণ অংশগ্রহণ করেন।
কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কঠোর ও সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
সভায় উপস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কনসাল জেনারেলগণসহ সকলকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম, (বার) বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরবাসীর জানমাল ও সম্পত্তি রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ ইউনিটে ৩ শতাধিক বিসিএস ক্যাডারসহ ৩২ হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের মধ্যে সাইবার ইউনিট, সোয়াট, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট, স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ, সাইবার সিকিউরিটি টিম, ওয়ান স্টপ পুলিশ সার্ভিস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ইউনিট।
তিনি আরো বলেন, কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় ২০১৩ সাল থেকে ডিএমপি কমিশনারের নিবিড় তত্ত্বাবধানে একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ৯৭৯ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে গঠিত ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগ এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবসময় কূটনীতিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে। সম্মানিত কূটনীতিকদের বিভিন্ন স্থাপনাসহ কুটনৈতিক এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগ। এ বিভাগের অফিসার ও ফোর্স ২৪ ঘন্টা কূটনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তরিকতা এবং পেশাগতভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় পুলিশ যেভাবে কাজ করছে তার জন্য ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগ তথা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। ঢাকা মহানগরকে নিরাপদ রাখতে পুলিশ দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাছাড়াও কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেব পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি আইটিও প্রথমেই কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগ তথা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। ডিএমপির পক্ষ থেকে দৃঢ় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করায় বিগত ৫ বছরে কূটনীতিক নিরাপত্তায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ২০১৬ সালের ঘটনার পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গৃহীত কার্যক্রমের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
সম্প্রতি রাজারবাগে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ পুলিশ বেসবল টিম ও ঢাকাস্থ জাপান কমিউনিটির মধ্যকার বেসবল খেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ খেলার মাধ্যমে বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়েছে। এক সময় বাংলাদেশ পুলিশ বেসবল খেলায় চ্যাম্পিয়ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পুলিশের সেবার প্রশংসা করে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের ডিন আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি বলেন, আমরা যখন পুলিশের নিকট সহায়তা চেয়েছি, আমাদের প্রয়োজনে সহযোগিতা করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগ। কূটনীতিকদের সার্বিক নিরাপত্তায় এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রধান মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার) বলেন, ২০১৬ সালের হলিআর্টিজান হামলার পর ঢাকা মেট্রোপলিট পুলিশ দৃঢ় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। গৃহীত নিরাপত্তা পরিকল্পনা মোতাবেক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটসহ অন্যান্য সকল ইউনিট সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
উক্ত মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ আশরাফুল ইসলাম বিপিএম।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।