ছেলে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সফরে বেরিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। ছেলের প্রতি সমর্থনের বিষয়টি জনসমক্ষে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই তাঁর এ সফর বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর গত মাসে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর যে আন্তর্জাতিক চাপ ও সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যেই চলতি সপ্তাহে বাদশাহ এ সফর শুরু করলেন।
সফরের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্স মধ্যাঞ্চলীয় আল-কাসিম প্রদেশে পৌঁছালে সেখানকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও শিশুরা ফুল দিয়ে তাঁদের অভ্যর্থনা জানায়। বাদশাহর আগমন উপলক্ষে কাসিমের সড়কগুলোতে সারি করে লাগানো হয় সৌদি আরবের পতাকা; স্থান পায় বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সের বড় বড় ছবিও।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ জানায়, কাসিম সফরে সালমান বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন, যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ১১২ কোটি ডলার। বাদশাহর সফরকে স্মরণীয় করে রাখতে কট্টর রক্ষণশীল এ প্রদেশটির কারাগার থেকে বেশ কিছু বন্দিকেও মুক্তি দেওয়া হয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ৮২ বছর বয়সী বাদশাহ সালমানের সাম্প্রতিক এ জনসমক্ষে আসার প্রধান কারণ ছেলের প্রতি সমর্থন দেখানো। সৌদি আরবের শাসনকাজের প্রায় সব কিছুই ক্রাউন প্রিন্স দেখভাল করলেও খাশোগির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মোহাম্মদের ভাবমূর্তি এখন অনেকটাই তলানিতে। কারণ মোহাম্মদই খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেছে তুরস্ক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সাংবাদিক হত্যার নৈতিক দায় মোহাম্মদের ওপরই বর্তায়, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠে নামতে হয় বাদশাহ সালমানকেই। তুরস্কের সঙ্গে কথা বলতে নিজের এক বিশ্বস্ত উপদেষ্টাকে দেশটিতে পাঠান তিনি। কয়েক সপ্তাহ আড়ালে থাকার পর ক্রাউন প্রিন্সও জনসমক্ষে জানান, খাশোগি হত্যায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
আল-সৌদ বংশের সমালোচক হিসেবে পরিচিত লন্ডনভিত্তিক সৌদি লেখক মাদাউয়ি আল-রাশিদ বলেন, ‘খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর সৌদিদের মধ্যে নানা ধরনের ভয়, আশঙ্কা ও দুশ্চিন্তা কাজ করেছে। এ কারণেই বিভিন্ন অঞ্চলে বাদশাহর এ সফর, তিনি যে এখনো তাঁর অবস্থানে আছেন এবং তিনিই সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর, সফরে সেটি নিয়েই ফের আশ্বস্ত করা হবে।’
টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপসাগরীয় রাজনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক গ্রেগ গস বলছেন, বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সের সফরও দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতাকে শান্ত করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। গ্রেগ এও বলেন, ‘তবে কোনো কিছুই এখন আর সমস্যা হবে না, বাদশাহ সম্ভবত এ বিষয়ে আস্থা ফিরে পেয়েছেন।’ সূত্র : রয়টার্স।