ডিএমপি নিউজঃ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ড্রাইভার, মালিক ও পথচারীদের দায়িত্ব রয়েছে। সকলে সচেতন হলে ট্রাফিকের শৃংখলা ফেরানো সম্ভব। ট্রাফিক শৃংখলা একটি জাতির সভ্যতার প্রতীক। সড়কে ট্রাফিক শৃংখলা ফেরাতে পুলিশ দিনরাত কাজ করছে। সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আইন মানলে, সাধারণ মানুষ আইন মানবে।
আজ ১৩ অক্টোবর ২০১৮ সকাল ১১টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশে সকলের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম। ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।
প্রধান বক্তা হিসেবে ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আলোচক হিসেবে তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ম. তামিম, নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেল। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম বিপিএম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে ‘ট্রাফিক গাইড বুক’ নামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সড়কের শৃংখলা ফেরাতে সকলে সহযোগিতা চেয়ে কমিশনার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দিনে ৮ ঘন্টা কাজ করে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা ডিউটি করে থাকে। সব ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ উপেক্ষা করে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। আইন না মানার সংস্কৃতি আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। রাস্তায় নামলে কেউ আইন মানতে চাই না। ট্রাফিক শৃংখলা ফেরাতে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন একান্ত জরুরী।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করে আমাদের পথ দেখিয়েছে। এজন্য তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ট্রাফিকের বিশৃংখলা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। নিয়ম ভাঙ্গার অভ্যাস থেকে ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগবে। সড়কের শৃংখলা ফিরে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। সড়কের শৃংখলা আনতে হলে সকলকে সচেতন হয়ে আইন মানতে হবে। পুলিশের কোন সদস্য ট্রাফিক আইন ভংগ করলে একটুও ছাড় দেয়া হবে না। আমাদের অহংকার করার মত অতীত রয়েছে। কেন আমরা দেশটাকে পরিবর্তন করতে পারব না। দুর্গাপূজার পরে রোভার স্কাউট, বিএনসিসিসহ অন্যান্যদের নিয়ে ১৫ দিন থেকে মাস ব্যাপী ট্রাফিক কর্মসূচি পালন করব।’
প্রধান বক্তার বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘একটি দেশের উন্নয়নের পরিচয় সে দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে রাস্তায় দিনকে দিন গাড়ি বাড়ছে, বাড়ছে যানজট। এখন সময় এসেছে এগুলো কন্ট্রোল করার। আমাদের সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইন মানতে হবে। শিক্ষার্থীরা তোমরা নিজেরা আইন মানবে পরিবারকেও আইন মানতে বলবে। বিদেশের অনেক দেশে গাড়ির পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার করে। এতে যেমন যানজট হ্রাস পাবে তেমনি স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। বিদেশের মত এদেশেও সাইকেলের জন্য আলাদা লেন থাকা দরকার।’
অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ঢাকা শহরের দেড় কোটি জনগণের জন্য ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা অত্যন্ত কম। এই কম সংখ্যক পুলিশ দিয়ে ট্রাফিকের শৃংখলা ফেরানো সম্ভব না। আমাদের সকলকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। ট্রাফিক আইন ভাঙ্গার মাধ্যমে সকলের মধ্যে আইন ভাঙ্গার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। পুলিশের কাছে অনুরোধ আইন যেই ভঙ্গ করবে তাকে একটুও ছাড় দিবেন না।
স্থাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, পুলিশকে আমরা ভয় পাব কেন? পুলিশ আমাদের বন্ধু। ভয় পাবে তারা যারা সন্ত্রাসী ও আইন অমান্যকারী। তোমরা শিক্ষার্থীরা যারা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করেছ যা নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। তোমরা দেখিয়েছ কিভাবে সড়কের শৃংখলা ফেরাতে হয়। ডিএমপি কমিশনারকে অনুরোধ করে বলেন, গাড়িতে অনতিবিলম্বে ফ্লাগ স্ট্যান্ড ব্যবহার বন্ধ করুন।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ট্রাফিক আইন মানার কোন বিকল্প নেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে মালিক-শ্রমিকদের সচেতন করতে কাজ করছি। অনেকে সচেতনতার বিষয়টি গভীরভাবে নিচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের বড় সমস্যা সড়কে ধীর গতি ও গতিশীল গাড়ি এক সাথে চলাচল করে। অন্য গাড়ির মত রিক্সায়ও লুকিং গ্লাস লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।
খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ডিএমপি দীর্ঘদিন যাবৎ ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সড়কের দুর্ঘটনা রোধে চালকের পাশাপাশি পথচারীসহ সকলকে আইন মানতে হবে। সড়কের শৃংখলা ফেরাতে আমরা পুলিশকে সব সময় সহযোগিতা দিবে যাব।
সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত কমিশনার ট্রাফিক বলেন, ট্রাফিকের শৃংখলা ফেরাতে পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। ট্রাফিকের শৃংখলা ফেরাতে সকলকে আইন মানতে হবে। সকলে আইন মানলে ট্রাফিক শৃংখলা ফেরানো সম্ভব। দীর্ঘ দিনের আইন না মানার অনিয়ম একদিনে ঠিক হবে না। তবে আমরা আশাবাদী সকলে আইন মানবে।
উক্ত ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চিত্র নায়ক ফারুক আহমেদ, জায়েদ খান, রিয়াজ, অভিনেতা আহমেদ শরীফ, নাদের চৌধুরী, ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশ স্কাউটের জাতীয় কমিশনার সরোয়ার মোহাম্মদ শাহরিয়ার, সরকারি বিজ্ঞান কলেজের প্রিন্সিপ্যাল বনমালী ভট্টাচার্য। এসময় ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশে উপস্থিত ছিল রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা, পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ ডিএমপি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
ট্রাফিক সচেতনতামূলক সমাবেশের পরপরই আমন্ত্রিত অতিথি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ট্রাফিক সচেতনতামূলক র্যালি হয়। র্যালি শেষে পরিবহণ যাত্রী ও পথচারীদের মাঝে ফুল ও ট্রাফিক সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।