ডিএমপি নিউজঃ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে একই পরিবারের তিন জন নিহতের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে কটিয়াদী থানা পুলিশ। নিহত তিনজন হলো- আসাদ মিয়া (৫৫), তার স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪২) ও তাদের শিশুপুত্র লিয়ন (১২)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-নিহতের ছোট ভাই দ্বীন ইসলাম (৪০), ছোট বোন নাজমা (৪২), মা কেওয়া বানু (৬৫) ও ভাগিনা আল-আমিন (৪২)।
কিশোরগঞ্জ হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সোনাহর আলী ডিএমপি নিউজকে জানান, গ্রেপ্তারকৃত দ্বীন ইসলাম খুনের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার জবানবন্দিতে বেড়িয়ে আসে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা। আসামী দ্বীন ইসলামের ঘর ও তার ভিকটিম বড় ভাইয়ের ঘর মুখোমুখি। ভাইয়ের সাথে তার নিজের ও দুই বোনের বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। বড় ভাই আসাদ মিয়া পরিবারসহ ঢাকা থাকতেন। গত জানুয়ারি মাসে তার বড় ভাই পরিবারসহ বাড়িতে এসে থাকা শুরু করেন এবং স্থানীয় বাজারে দোকান দেন। এতোদিন তারাই বাড়ির সবকিছু ভোগ করতো ইদানিং তার ভাই ও ভাবি তাদের সব কিছুতেই বাঁধা দেয়। এ নিয়ে তার মা, বোনসহ সবার সাথে প্রায়শই ঝগড়া হত ও তার ভাই-ভাবি অনেক বকাঝকা করতো। এতে ধীরে ধীরে তার মনে ক্ষোভ জন্ম নেয়। সে তার ভাইয়ের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।
হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, স্বীকারোক্তিতে দ্বীন ইসলাম জানিয়েছে, ঘটনার দিন বুধবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭-৮টার দিকে ভাবি পারভীন আক্তার উঠানে বসে চুলায় রান্না করছিল। এ সময় পারভীন আক্তারের মাথায় পেছন দিক থেকে সে শাবল দিয়ে সজোরে আঘাত করে। সাথে সাথে পারভীন আক্তার নিঃশব্দে মাটিতে লুটিয়ে পরে। পরে লাশ তার ভাইয়ের ঘরে খাটের ওপর রাখে এবং উঠানের রক্ত কাপড় দিয়ে দ্রুত মুছে ফেলে। এসময় তার ছোট ভাতিজা লিয়ন বাইরে দোকানে ছিল। সে তার ছোট্ট ভাতিজার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিট পর তার ভাতিজা ঘরে এসে মা মা বলে ডাকতে থাকে। এই সুযোগে সে ঘরের ভেতরে লুকিয়ে থাকে। ছোট্ট ভাতিজা ঘরে আসতেই সে ওই শাবল দিয়ে মাথায় ঘাই দেয় এবং শাবলের ধারালো অংশ মাথার ভেতরে ঢুকে যায়। ভাতিজার মৃত্যু নিশ্চিত করে সে লাশও খাটের ওপর রাখে। এসময় সে ঘর থেকে কোদাল নিয়ে এসে তার ভাইয়ের ঘরের পাশে গর্ত খুঁড়তে থাকে এবং অপেক্ষা করতে থাকে কখন তার ভাই আসবেন। প্রতিদিন তার ভাই রাত ১২ টার পর বাড়ি আসেন। গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে একসময় আনুমানিক রাত ১২:৩০ টায় দ্বীন ইসলাম তার ভাইয়ের কাশির শব্দ শুনে, তখন সে গর্ত খোঁড়া বন্ধ করে ঘরের পিছনে লুকায়। তার ভাই দরজায় আসতেই সে পিছন থেকে মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করে। উপর্যপুরি কয়েকটি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে লাশ টেনে নিয়ে সেই গর্তে প্রথমে ভাইয়ের লাশ, তারপর ভাবির লাশ ও পরে ভাতিজার লাশ রেখে মাটিচাপা দেয়।
কটিয়াদী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, ২৯ অক্টোবর, ২০২০ সকাল থেকেই আসাদ মিয়া, তার স্ত্রী পারভীন আক্তার ও তাদের শিশুপুত্র লিয়নকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলনা। ভিকটিমের মেঝো ছেলে মামার বাড়ি থেকে বাড়িতে এসে সারাদিন খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সন্ধ্যা ০৭:০০ টায় কটিয়াদী থানায় নিখোঁজ সংক্রান্তে সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন। সাধারণ ডায়েরী করার পরপর কটিয়াদী থানার গচিহাটা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমের ঘরের সাথেই নতুন মাটি দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। তারা মাটি খুঁড়ে একজনের হাত দেখতে পায় এবং পরবর্তি সময়ে মাটির গর্ত খুঁড়ে একে একে তিন জনের লাশ উদ্ধার করে।