প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান দুই মেয়াদে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ জন কর্মী বিদেশ গমন করেছে।প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মো. আয়েন উদ্দিনের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে সরকার থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ খাতের গুরুত্ব অপরিসীম বিবেচনায় বিদ্যমান শ্রম বাজার ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বা হাইকমিশনে ২৯টি শ্রম উইং প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের অক্টোবরে মরিশাসে শ্রম উইং প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তিনি বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব নিরসনের লক্ষ্যে কর্মী গ্রহণকারী দেশসমূহের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জনশক্তি প্রেরণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক জোট যেমন, জিএফএমডি, কলম্বো প্রসেস, বুদাপেস্ট প্রসেস, আবুধাবি ডায়লগসহ অন্যান্য জোটের মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকতর অধিকার ও সুরক্ষার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলসহ ৫০টি নতুন শ্রম বাজার সম্পর্কে ‘স্টাডি’ সম্পন্ন করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশ সরকারের জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখন মালয়েশিয়া কর্মী গমন করছে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের অবিরাম শ্রম কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সে দেশের সরকার ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বরে নির্মাণ, শিল্প এবং কৃষি খাতে বাংলাদেশ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে জারিকৃত সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। এর ফলে বাংলাদেশের বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ায় অভিবাসনের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি আরব অধিক সংখ্যক নারী কর্মীর পাশাপাশি তাদের নিকট আত্মীয় পুরুষ কর্মী নিতে সম্মত হয়েছে।২০১৬ সালের ৪-৬ জুনে তার সৌদি আরব সফরকালে সৌদি বাদশার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে অধিক হারে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। এর ফলে ২০১৬ সালের ১০ আগস্টে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কর্মী গ্রহণের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের শ্রম কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পাঠানোর বিষয়ে চলতি বছর মার্চে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে ৩ বছরের স্থলে ৫ বছর পর্যন্ত সেদেশে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অদক্ষ শ্রমিকের তুলনায় দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেশি। তাই এ বিষয়টি মাথায় রেখে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করছে। সে অনুযায়ি বিভিন্ন ট্রেডে কর্মীদের দক্ষ করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের সময় কর্মীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়। কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদানের সাথে একটি মেশিন রিডেবল স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হয়। কর্মীরা ভিসা অনলাইনে যাচাই করে বিএমইটির ওয়েবসাইটে অনলাইন ভিসা চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত মোবাইল এ্যাপস চালু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬টি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। ২৯টি জেলায় বিদেশগামী কর্মীদের প্রাক বহির্গমন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ই-লার্র্নিং পদ্ধতিতে গৃহকর্মী পেশায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ২৯টি টিটিসিতে চালু করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি মোবাইল এ্যাপস চালু করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অভিবাসন ব্যয় হ্রাস এবং বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩’ নামে একটি নতুন আইন কার্যকরা হয়েছে। এ অভিবাসন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, প্রতারণা, অপপ্রচার ইত্যাদি অপরাধের সাথে জড়িত রিক্রুটিং এজেন্সি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদন্ড ও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডের মতো কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া ২০০৬ সালে প্রণীত বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি যুগোপযোগী করে ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংষ্থান নীতি, ২০১৬’ প্রণয়ন করা হয়েছে। নিরাপদ অভিবাসন ও মানব পাচার রোধে মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় ভিজিলেন্স টাস্কফোর্স (ভিটিএফ) নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি বছর জুলাই থেকে ২০২২ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য বিএমইটি কর্তৃক ‘অভিবাসী কর্মীদের সচেতনতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।