নৌ পথে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নৌ পথ ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি এবং দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার মধ্য দিয়ে ৪ বছর পার করলো নৌপুলিশ।
নৌ পুলিশের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের কনভেনশন হলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। নৌ পুলিশের ডিআইজি শেখ মুহম্মদ মারুফ হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জনাব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন এবং বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নব গঠিত নৌ পুলিশ দ্রুততম সময়ে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৪ সালে কার্যক্রম শুরুর পর নদী পথের বিভিন্ন অপরাধ দমনের পাশাপাশি লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা, ট্রলার, অবৈধ বাল্কহেড চলাচলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দুর্র্ঘটনার হার অনেক হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। সরকার নৌ পুলিশকে একটি শক্তিশালী ইউনিট হিসেবে গড়ে তুলছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা, উন্নয়ন, প্রগতি, জননিরাপত্তা তথা সার্বিক কল্যাণ সাধনে যুগোপযোগী পুলিশ বাহিনীর বিকল্প নেই। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার নৌ পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নতুন প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, জনবল বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে, যার সুফল ইতোমধ্যে দেশের জনগণ পেতে শুরু করেছে।
স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, নদীমাতৃক এ দেশে নৌ পুলিশের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। দেশের ৪ থেকে ৬ হাজার কিলোমিটার নৌ পথে অপরাধ দমন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, পণ্য পরিবহণে নৌ পুলিশকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। নৌ ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের সংখ্যা অত্যন্ত কম। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে নৌ পুলিশ গঠিত হয়েছে। নৌ পথ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সাথে সমন্বয় করে নৌ পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনবান্ধব পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নৌ পুলিশকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। তিনি পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে নৌ পথের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবেলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাটকা নিধনরোধ ও মা ইলিশ সংরক্ষণে নৌ পুলিশের কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে জাটকা নিধনরোধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নৌ পুলিশের কৃতি সদস্যদের মাঝে সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। পরে অতিথিরা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটেন। ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং পুলিশ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর নৌ পুলিশ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঈদ, পূজা, বিশ্ব ইজতেমা, পূণ্যস্নান, নৌকাবাইচ, ওরস শরীফ ইত্যাদি উৎসব অনুষ্ঠানে নৌপথে নিরাপত্তা দিয়ে আসছে নৌ পুলিশ। এ ইউনিটের পেশাদার সদস্যরা লঞ্চ দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থাকে সহায়তা করে থাকে।
নৌ পুলিশের তৎপরতার কারণে দেশে ইলিশ ও মৎস্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২-২০১৩ বছরে ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫১ হাজার ২২৩ মেট্রিক টন। ২০১৫-২০১৬ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন।
নৌ পুলিশ নৌ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে লঞ্চ মালিক ও শ্রমিক সমিতির সাথে নিয়মিত সভা করে থাকে। এছাড়া, লঞ্চ ঘাট ও টার্মিনালে অজ্ঞান ও মলম পার্টি, ছিনতাইকারী এবং পকেট মারের কবল থেকে যাত্রী সাধারণকে রক্ষার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করায় বর্তমানে এ ধরণের অপরধ প্রবণতা অনেকাংশে কমে এসেছে।