সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে যুবসমাজ তথা তরুণদের ভুমিকা, উগ্রবাদের এই সমস্যা সমাধানে তরুণরা কি ভাবছে তা জানতে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি) আয়োজন করে ‘সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী যুব সংলাপ’।
আজ (২৪ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় ‘সহিংস উগ্রবাদ বিরোধী যুব সংলাপ’। সংলাপে অংশগ্রহণ করে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পেশাজীবী ও সাংবাদিকবৃন্দ। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিটিটিসি’র প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সকলকে স্বাগত জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, তরুণদের একটি অভিযোগ তাদের কথা কেউ শুনেনা। তাদের উপর সবকিছু চাপিয়ে দেয়। এই কথা থেকে বেরি আজ আমরা তরুণদের কথা শুনব। তরুণরা সহিংস উগ্রবাদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার বিষয়ে কি ভাবছে। সিটিটিসি’র প্রধানের এমন কথার ভিত্তিতে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাংবাদিকবৃন্দ সহিংস উগ্রবাদ নিরসণে বিভিন্ন পন্থা ও সমস্যা তুলে ধরেন।
লালবাগ মাদ্রাসার ছাত্র সামসুদ্দিন বলেন, ধর্মের জায়গা আমাদের সকলের দূর্বলতা রয়েছে। আমরা কোন কিছু সঠিকভাবে না জেনে অন্ধের মত বিশ্বাস করি। তাতে আমরা সহজে বিপথে চলে যাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মটিভেট করতে হবে।
ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী কাছিন সুলতানা চামেলী বলেন, ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে সমসাময়িক ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। মতামতে আরো উঠে আসে, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি উগ্রবাদ বিরোধী কাউন্সিলিং টিম থাকলে তারা উগ্রবাদ সম্পর্কে ধারণা দিবে। তরুণদের কথা শুনতে হবে যাতে করে তারা ফ্রাস্টেটেড না হয়। দেশের বেকারত্ব সমস্যা সমাধান করতে হবে।
বদরুন্নেসা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ইন্টারনেটের অধিক ব্যবহার, তরুণদের মানসিক অবস্থা ও হতাশা উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। সকল ধরণের গুজব মোকাবেলা করা। একটি ভূয়া নিউজ যত দ্রুত তরুণদের স্পর্শ করে অতটা সহজে সেই মিথ্যাকে সড়ানো যায়না। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অনেকে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন।
সকলের বক্তব্য শুনে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ভিডিও গেমও প্রভাবিত করে জঙ্গিবাদকে। ভিডিও গেমের মাধ্যমে বিভিন্ন অস্ত্র চালানো এবং পরবর্তী সময়ে বাস্তবে অস্ত্র চালাতে আগ্রহী হয়ে উঠে তরুণরা। সাইবার স্পেস বা ইন্টারনেট রেডিকালাইজেশনের জন্য বড় প্লাটফর্ম। উগ্রবাদে জড়িয়ে যাওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ সামাজিক বঞ্চনা। তরুণরা সামাজিক বঞ্চনা থেকে উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ে। প্রিজন রেডিকালাইজেশন ঠেকানোর জন্য কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে উগ্রবাদের চিন্তার ভ্রান্ত ধারণা থেকে ফিরিয়ে আনা একটি চ্যালেঞ্জ। কেন আপনি লাদেন বা জঙ্গি তামিমের মত ব্যক্তিকে আদর্শ মেনে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদের মত সহিংস পথ বেছে নিবেন? আদর্শবান বা রোল মডেল আমাদের দেশে অনেক ব্যক্তি রয়েছে। যাদেরকে অনুসরণ করা যায়। জিহাদের মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী বলে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে ভ্রান্তধারণাপুষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষ।
তিনি আরো বলেন, কেউ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে কিনা তখনি বুঝবেন যখন তার আচার-ব্যবহারে পরিবর্তন আসবে, অধিকাংশ সময় একা থাকবে, নতুন নতুন বন্ধু বানিয়ে তাদের সাথে অধিক সময় ব্যয় করবে, পুরাতন বন্ধুদের সাথে দুরত্ব তৈরি করবে, বাড়ির কাছে মসজিদ রেখে দূরে কোন নির্দিষ্ট মসজিদে নামাজ পড়তে যাবে, দরজা বন্ধ করে ইন্টারনেটে অধিক সময় কাটানো ও হঠাৎ করে অধিক ধার্মীক হয়ে যাওয়া। আপনার পরিবারের কাউকে হঠাৎ করে এমন হতে দেখলে তাকে সময় দিন, তার কথা শুনুন ও তাকে বুঝান। এই ওয়ার্কশপ আমাদের প্রথম নয়। আমরা নিয়মিত এমন সচেতনতামূলক ওয়ার্কশপ করে থাকি। বিশেষ ব্যক্তি, শ্রেণী নিয়ে আমরা ওয়ার্কশপ করে থাকি যাতে করে সহজে বেশি মানুষের নিকট আমাদের ম্যাসেজ পৌঁছে যায়। এমনকি আমরা জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছি। জানতে চেষ্টা করেছি নিহতদের জাঙ্গিবাদে জড়ানোর সময় চাল-চলনের কেমন পরিবর্তন হয়েছিল। তরুণদের সংলাপে অনেক সুপারিশ উঠে এসেছে। আমরা আমাদের স্থান থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। জাতীয়ভাবে আগামী বছরের শুরুতে এমন ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হবে। তাতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপেনিং লিডার হিসেবে ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিয়ে গৃহীত ম্যাসেজ সহপাঠিদের মাঝে ছড়িয়ে দিবে।
এ সময় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপি প্রতিনিধি মিস্টার রবার্ট, ডিবিসি নিউজ এর সঞ্চালক নবনিতা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ ফারজানা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শবনম আজিম ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।