ডিএমপি নিউজ রিপোর্টঃ বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটিরও অধিক লোক কোননা কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিঘন্টায় অকাল মৃত্যুবরণ করছে পাঁচজন লোক। সাধারণত ৭৫ ভাগ কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে রোগীরা বুঝতেই পারেনা যে, সে ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত। কিডনি যখন বিকল হয়ে যায় তখন বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। অন্যদিকে কিডনি রোগের চিকিৎসা এতোই ব্যয়বহুল যে, এ দেশের শতকরা ১০ ভাগ লোকেরও সাধ্য নেই এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাবার। কিডনি রোগ সংক্রান্ত এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ কথা বলেছেন। সেমিনারে ক্র্যাবের কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের চীফ কনসালটেন্ট ও ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এ সেমিনারে ভিডিও প্রেজেনট্রেশন এর মাধ্যমে কিডনি রোগের কারন, প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
পরে বিশ্ব কিডনি দিবসের প্রাক্কালে ক্যাম্পাস ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন এর সাথে যৌথ উদ্যোগে সাংবাদিকদের ফ্রি কিডনি স্ক্রিনিং এবং কিডনি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেমিনার ও দিনব্যাপী বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আয়োজন করে। গতকাল এ আয়োজনে প্রায় ২শ সাংবাদিকের কিনডি সংক্রান্ত রোডের চিকিৎসা ও প্যাথলজি পরীক্ষা করা হয়
মূল প্রবন্ধে কিডনী রোড়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এম এ সামাদ বলেন, অনেক রোগ আছে যা শিশুবয়স থেকে শুরু হয়ে সুপ্ত অবস্থায় বাড়তে থাকে এবং বড় হলে তা কিডনি বিকলে রুপান্তরিত হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে একটু সচেতন হলেশ তকরা ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে ভয়াবহ কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেহেতু কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক, প্রাথমিক অবস্থায় এর কোন লক্ষন বা উপসর্গ প্রকাশ পায়না তাই সুপ্ত রোগ প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন ঝুঁকিপূর্ণ লোকদের নিয়মিত কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষা। আর সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ক্র্যাবের সদস্যসহ সাংবাদিকদের জন্য এই বিশেষ আয়োজন।অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ আরো বলেন, দেশে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৬৩% লোকের মৃত্যু হয়, আগামী ১০ বছরে এ হার ৭০% ছাড়িয়ে যাবে, কারণ প্রতিবছর ২% হাড়ে বৃদ্ধি পায়। এই জীবনসংহারী রোগ সমূহের মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ অথচ একটু সচেতন হলেই এবং লাইফষ্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগ প্রতিরোধকরা সম্ভব। বর্তমান বিশে^ ১০ জনের মধ্যে ০১ জন কিডনি রোগী । আমেরিকায় বছরে ৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় কিডনি রোগীদের পিছনে। আগামী দশকে কিডনি চিকিৎসায় ব্যায় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ৫৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
তিনি বলেন কিডনি রোগ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিকভাবে আজ ১০টি স্বর্নালী সোপান কঠিনভাবে অবলম্বনের তাগিদ তৈরি হয়েছে। এই ১০টি পন্থা হল – কায়িক পরিশ্রম ও খেলাধূলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান থেকে বিরত থাকা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ যাতে প্রতিদিন শাকসবজি ও ফল থাকবে, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা ও ফাষ্ট ফুড পরিহার করা,পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা, পরিচ্ছন্ন থাকা ও খাবার পূর্বে হাত ধোয়া, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ব্যাথানাশক ও এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন না করা, নিয়মিত কিডনির কার্যকারীতা পরীক্ষা করা।