দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরায় তিলের উৎপাদন বাড়ছে। কম খরচে ভালো লাভ হওয়ায় ফসলটি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাতক্ষীরায় চলতি মৌসুমে গতবারের তুলনায় তিলের আবাদ বেড়েছে ২০ শতাংশ। জেলায় এবার কৃষিপণ্যটির উৎপাদনও ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় তিলের চাষ হয়েছে ৭৬০ হেক্টর জমিতে। জেলায় গত মৌসুমের তুলনায় এবার পণ্যটির আবাদ হয়েছে ২০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ২৪০ হেক্টর, কলারোয়ায় ২৭০, তালায় ২০০, দেবহাটায় ১৫, কালিগঞ্জে ২৫, আশাশুনিতে আট ও শ্যামনগরে দুই হেক্টর জমিতে কৃষিপণ্যটির চাষ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল মান্নান জানান, অন্যান্য অনেক ফসলের তুলনায় তিল চাষ বেশি লাভজনক। কৃষিপণ্যটি উৎপাদনে কৃষকের খরচ অনেক কম। এছাড়া এটি উৎপাদনে সময়ও লাগে অনেক কম।
একই কথা জানালেন সাতক্ষীরার তিল চাষীরাও। সদর উপজেলার কাথণ্ডা গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান জানান, অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি তিনি তিলের আবাদ করছেন পাঁচ-ছয় বছর ধরে। কৃষিপণ্যটি চাষে খরচ ও সময় লাগে তুলনামূলক কম। এছাড়া তিল উৎপাদন থেকে লাভও আসে অনেক বেশি। এ বছরও দুই বিঘা জমিতে তিলের চাষ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, গত বছর প্রায় দেড় বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছিলাম। এর মধ্যে প্রতি বিঘা জমিতে সার, কীটনাশক ও বীজ বপনসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আমার মোট ব্যয় হয়েছিল ৩-৪ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে এ সময় দেড় বিঘা জমি থেকে পাওয়া তিল বিক্রি করে লাভ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। এ বছরও ৪০-৪৫ হাজার টাকা লাভ হতে পারে বলে আশা করছি।
চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছেন কলারোয়া উপজেলার সরশকাটি গ্রামের কৃষক কমরউদ্দীন। তিনি বলেন, তিন বিঘা জমিতে ২৮-৩০ মণ তিল উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ কৃষকই কমবেশি তিল চাষ করেন। জেলার তেলকলগুলোয় ভালো চাহিদা থাকায় কৃষিপণ্যটি বিক্রি করতেও কোনো সমস্যা হয় না। সব মিলিয়ে এ মৌসুমের উৎপাদন থেকে আমার লাভ হতে পারে ৭০-৭৫ হাজার টাকা।
সাতক্ষীরা জেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলার দোআঁশ মাটি তিল চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এখানে প্রতি হেক্টর জমি থেকে ১ দশমিক ২৫ টন পর্যন্ত তিল উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়া সারা দেশে কৃষিপণ্যটির চাহিদাও অনেক। ফলে এটি আবাদের মাধ্যমে ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষকেরাও লাভবান হতে পারবেন।