ডিএমপি নিউজঃ শুরুটা নাটকীয়। হঠাৎ করে অফিসে ঢুকেই নিজেদের সিআইডি’র কর্মকর্তা পরিচয় দিলো দুই আগন্তক। সেই সাথে চলতে থাকল নানান হুমকি-ধামকি। ফোনে চলছে কথিত বড় অফিসারের সাথে কথপোকথন। বোঝালো, তার নির্দেশনায় চলছে এই ছোট্ট অপারেশন। আসলে পুরোটাই ফাঁকি। সিআইডি কর্মকর্তার ছদ্মবেশে এরা মূলত প্রতারক।
এমনই এক প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পল্টন থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ আশরাফুল আলম (৩৫), মোঃ জাকির হোসেন (৩১) ও সোহেল (২৪) । এ সময় তাদের নিকট থেকে প্রতারণা করে নেয়া ৯৪ হাজার পাঁচশত টাকা, একটি এটিএম কার্ড ও ২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় মামলা রুজু হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, এ প্রতারক চক্রের প্রতারণার শিকার হন একজন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পল্টন থানাধীন নয়া পল্টন সিটিহার্ট মার্কেটে একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালাতেন। গত ২ এপ্রিল অফিসে কাজ করাকালীন উল্লেখিত আশরাফুল ও জাকির তার অফিসে আসে। অফিসে ঢুকে নিজেদেরকে সিআইডি পুলিশের পরিচয় দেয়। সেই সাথে তারা বলে, ‘ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করতে হলে আমাদেরকে এখন ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে এই অফিসে অবৈধ মালামাল রেখে ও তোমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সর্বনাশ করে দিবো।’ ভিকটিম টাকা দিতে অস্বীকার করলে, ভিকটিমকে ও তার ভাগিনা ( যে তার অফিসে কাজ করতো) রানাকে অন্যায়ভাবে অফিসে আটকে রাখে। তাদের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয় তারা। প্রতারকরা তৎক্ষণাত বলে, ‘তোমাদের কাছে যা আছে এখন তাই দাও, অবশিষ্ট টাকা পরে দিলেও চলবে।’ এই বলে ভিকটিমের ভ্যানিটি ব্যাগে রাখা ব্যবসায়ের ৪৯ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। সেই সাথে ব্যাগে থাকা ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পিন নম্বরও নেয়। সেই সময় তারা ফোনে কথিত অফিসারের সাথে বার বার কথা বলতে থাকে।
এক পর্যায়ে প্রতারকরা ভাগিনা রানাকে সিআইডি অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিমকে অফিস কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রেখে যায়। পরবর্তী সময়ে এটিএম কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে প্রতারক চক্র। সিআইডি’র গাড়ি এখানে সেখানে আছে বলে সোহেল রানাকে কখনও রিক্সা বা কথনও সিএনজিতে করে রাজধানীর আজিমপুর এলাকার দিকে নিয়ে যায় তারা। তাদের গতিবিধিতে সন্দেহ হলে আজিমপুর এলাকায় টহল পুলিশের গাড়ি দেখে রানা চিৎকার করলে এগিয়ে আসে টহল পুলিশ। পুলিশ ঐ কথিত সিআইডি কর্মকর্তাদের পরিচয় জানতে চাইলে ধরা পড়ে যায় তাদের ছলনা। তখন টাকা ও মোবাইলসহ একজন প্রতারককে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশ। অন্যজন পালিয়ে যায়। ভাগিনা রানা লালবাগ থানা পুলিশের মাধ্যমে পল্টন থানায় সংবাদ দিলে ভিকটিমকে বদ্ধ অফিসের তালা ভেঙ্গে উদ্ধার করে পল্টন থানা পুলিশ।
আটক প্রতারক আশরাফুলকে পল্টন থানার নিকট হস্তান্তর করে লালবাগ থানা। আশরাফুলের দেয়া তথ্য মতে গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন স্থানে অভিযান করে অপর দুই আসামী জাকির হোসেন ও সোহেলকে গ্রেফতার করে পল্টন থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিজ্ঞ আদালতের নিকট রিমান্ড চেয়ে তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।