ডিএমপি নিউজ: সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ এর ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে ১৮ লক্ষ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার তৈরী ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হ্যাকার গ্রুপের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এর সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ নাসিমুল ইসলাম, রেহানুর হাসান রাশেদ ও রাইসুল ইসলাম। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে হ্যাকিং এর কাজে ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল সেট, ২টি ল্যাপটপ ও ১টি সিপিইউ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, নগদ টাকা, ইলেকট্রনিক কার্ড ও ‘স্বপ্ন’ ই-ভাউচারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত বিপুল পরিমান পণ্য সামগ্রী জব্দ করা হয়।
৭ আগস্ট (শনিবার) নওগাঁ জেলা, গাইবান্ধা জেলা ও রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
রবিবার (৮ আগস্ট) দুপুর ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার)।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, বাংলাদেশের স্বনামধন্য সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ তাদের ওয়বেসাইটের মাধ্যমে সারাদেশের ১৮৬টি আউটলেটের সেলস মনিটরিং, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, কর্মী ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেনের হিসাব, ডিজিটাল ভাউচার ম্যানেজমেন্টসহ সকল ব্যবসায়িক কর্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ‘স্বপ্ন’ এর ডিজিটাল সিস্টেমটি তাই এডভান্স সাইবার সিকিউরিটি প্রটোকল অনুযায়ী অত্যন্ত সুরক্ষিত করে তৈরি করা হয়েছিল। সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ এর শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ব্রিচ করে বিপুল অংকের অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক ডিজিটাল ভাউচার জেনারেট করে বিক্রি করা হয়। এ বিষয়টি গত মাসের মাঝামাঝিতে ‘স্বপ্ন’ কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরবর্তীতে ‘স্বপ্ন’ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ডিএমপি’র সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের কাছে অভিযোগের মাধ্যমে জানান। এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
তিনি বলেন, সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সাইবার ইনভেস্টিগেটরদের একটি চৌকস টিম “স্বপ্ন” সুপার শপের ডিজিটাল সিস্টেমের ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও রিভার্স এনালাইসিস সহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে হ্যাকার চক্রটির ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে। এ হ্যাকার চক্রের সদস্য নাসিমুল, রাশেদ ও রাইসুলদের গ্রেফতার করা হয়।
সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ‘স্বপ্ন’-এর ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে ১৮ লক্ষ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার তৈরী করে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ২৫% ছাড়ে কয়েকটি ই-কমার্স ইউজারদের নিকট বিক্রি করে। এভাবে তারা জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি একাউন্টে জমা করে। গ্রেপ্তারকৃতদের নিকট হতে জব্দ করা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে হ্যাকার চক্রের সদস্যরা আন্তর্জাতিক অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক ফ্রিল্যানসিং প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট https://www.freelancer.com, https://xrosswork.com এবং বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি ই-কমার্স সাইটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম সিকিউরিটি ব্রিচ করে “বাউন্টি” দাবি করে।
এছাড়াও তারা প্রথম সারির বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স, প্রসিদ্ধ বাস কোম্পানি, ইলেকট্রনিক গেজেট, চেইন আউটলেটসহ স্বনামধন্য অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিং এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে। এমনকি সুচতুর এই হ্যাকারদের কাছে সরকারী-বেসরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমের একসেস রয়েছে। তারা বিভিন্ন ডার্ক ওয়েব মার্কেট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময়ে লগ ইন ক্রিডেনশিয়াল ক্রয় করে, যা ডিজিটাল ভাউচার তৈরীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় মর্মে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন।
গ্রেফতারকৃতদের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় রুজুকৃত মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।