ইউরোপিয়ান বর্ষসেরা ফুটবলারের (উয়েফা) সংক্ষিপ্ত সেরা তিনের তালিকায় বার্সেলোনার লিওনেল মেসি এবং রিয়াল মাদ্রিদের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নাম থাকা যেন নিয়মিত ঘটনা। ২০১১ সালে উয়েফা বর্ষসেরা পুরস্কার প্রবর্তন থেকেই সংক্ষিপ্ত তালিকায় এ দু’জন ছিলেন। গত সাত বছরের (২০১৭ সালসহ) একবারই এর ব্যতিক্রম হয়েছে। সেটা ২০১৪ সালে। সেবার সেরা তিনে ছিলেন না মেসি। তবে সংক্ষিপ্ত সেরা ১০ দশ ফুটবলারের তালিকায় বায়ার্নের ফিলিপ লামের সঙ্গে যৌথভাবে সেরা পাঁচে ছিলেন।
রোনালদোকে অবশ্য মেসির ভাগ্য বরণ করতে হয়নি। পুরস্কার শুরুর সাল থেকে আজোবধি সেরা তিনে নিজের জায়গাটা ধরে রেখেছেন। মেসি-রোনালদো উয়েফার সংক্ষিপ্ত তালিকায় এক, দুই আসন নিজেদের অধীনে রাখলেও তৃতীয়জন প্রতিবারই পরির্বতন হয়েছে। মেসি-রোনালদো ছাড়া আর কোনো ফুটবলার দ্বিতীয়বারের জন্যও এই তালিকায় ঠাঁই পাননি। যেমন ২০১১ সালে মেসি, রোনালদোর সঙ্গে তৃতীয় জন ছিলেন বার্সেলোনার জাভিয়ের হার্নান্দেজ জাভি, ২০১২ সালে বার্সেলোনার আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ২০১৩ সালে বায়ার্ন তারকা ফ্রাঙ্ক রিবেরি, ২০১৪ সালে মেসি ছিলেন না, রোনালদোর সঙ্গে দ্বিতীয় ও তৃতীয়জন ছিলেন বায়ার্নের আরিয়েন রোবেন এবং ম্যানুয়েল ন্যুয়ার, ২০১৫ সালে বার্সেলোনার লুইস সুয়ারেজ, ২০১৬ সালে অ্যাটলেিিটকো মাদ্রিদের অ্যান্তেনিও গ্রিজম্যান। এবার মেসি-রোনালদোর সঙ্গে তৃতীয়জন হলেন জুভেন্টাসের অভিজ্ঞ এবং বয়স্ক খেলোয়াড় তারকা গোলরক্ষক ইতালির জিয়ানলুইজি বুফন।
বুড়ো হাড়ের ভেল্কি ভালোই দেখিয়ে চলেছেন বুফন। হাটুর বয়সী ছেলেদের সঙ্গে এখনো পাল্লা দিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ৩৯ বছর বয়সী একজন ফুটবলারদের বুড়ো না বলে উপায় আছে! সেরা তিনে থাকা মেসির বয়স ৩০, রোনালদোর ৩২। আর সেরা দশে থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে কেবল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইব্রাহিমোভিচই কেবল বুফনের কিছুটা কাছাকাছি বয়সী (৩৫ বছর) ছিলেন। তারপরও ইব্রার চেয়ে ৪ বছর এগিয়ে রয়েছেন বুফন। তালিকায় সেরা দশে থাকা সবচেয়ে কনিষ্ঠ মোনাকো তারকা এমবাপের বয়স মাত্র ১৮ বছর। এত বয়সে উয়েফার বর্ষসেরা পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তিনে জায়গা করে নেয়া একটা রেকর্ডও। কারণ এত বয়সী কোনো খেলোয়াড় এর আগে সেরা তিনে ছিলেন না।
আগামী ২৪ আগস্ট মোনাকোতে সেরা তিনের একজনের হাতে উঠবে উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। রিয়াল মাদ্রিদের লুকা মডরিচ, টনি ক্রুস এবং সার্জিও রামোস, জুভেন্টাসের পাওলো দিবালা, মোনাকোর এমবাপে, বায়ার্ন মিউনিখের রবার্ট লেভানডফস্কি এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জøাতান ইব্রাহিমোভিচ তালিকায় সেরা দশে ছিলেন। তাদের পেছনে ফেলে তিনে উঠে এসেছেন মেসি, রোনালদো এবং বুফন। গত মৌসুম নিজ ক্লাবের হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্সই মূলত এই তিন তারকাকে সেরা তিনে নিয়ে এসেছে।
২০১১ সাল থেকে শুরু হয় উয়েফা বর্ষসেরা পুরস্কারের প্রবর্তন। প্রথম বছর তাতে বাজিমাত করেন বার্সার প্রাণভোমরা লিও মেসি। গত ছয় বছরে এই পুরস্কার আরো একবার ঘরে তুলেছেন আর্জেন্টাইন তারকা। সেটা ২০১৫ সালে। মেসির মতো রোনালদোও দু’বার উয়েফার সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে। এছাড়া ২০১২ সালে বার্সেলোনার আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এবং ২০১৩ সালে বায়ার্ন মিউনিখের ফ্রাঙ্ক রিবেরি।
গত মৌসুম স্বপ্নের মতো পার করেছেন রিয়াল তারকা রোনালদো। দলকে লা লিগা শিরোপা, চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা সুপার কাপ এবং ক্লাব বিশ্বকাপ জেতাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন রোনালদো। রিয়াল তারকাদের শিরোপার ভারে অনেকটাই ম্লান ছিলেন বার্সার মেসি। দলকে কেবল কোপা ডেল রে’র শিরোপা জিতিয়েছেন তিনি। তবে লা লিগা সর্বোচ্চ গোলদাতা (৩৭ গোল) করে উয়েফা পুরস্কারের নিজের নামটি অন্তর্ভূক্ত করেছেন মেসি। রোনালদো-মেসির চেয়ে কম আলোকিত ছিলেন না জুভেন্টাস গোলরক্ষক ইতালির বুফন। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে দলকে তুলে আনতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেও শিরোপা জেতাতে পারেননি। পুরো লিগে অসাধারণ পারফরম্যান্স করা বুফন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রিয়ালের কাছে ৪-১ গোলের ব্যবধানে হেরে বসে। ওই হারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন বুফন। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি ঘরে তুলতে না পারলেও জুভদের সিরি’আ লিগ, কোপা ইতালিয়া কাপ এনে দিয়েছেন।
১০ জনের তালিকা ছেটে তিনে নিয়ে আসার পেছনে চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ইউরোপা কাপে খেলা এমন ৮০টি ক্লাবের কোচ এবং ৫৪ জন ক্রীড়া সাংবাদিক কাজ করেছেন। তাদের ভোটেই মূলত নির্ধারণ করা হবে সেরা খেলোয়াড়কে। মেসি-রোনালদো-বুফনের গত মৌসুমের যে পারফরম্যান্স তাতে সেরা হওয়ার দৌড়ে মেসি, বুফনের চেয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছেন রিয়াল ফরোয়ার্ড রোনালদো! ২৪ আগস্ট মোনাকোতে শুধু উয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারই তুলে দেয়া হবে না একই সঙ্গে চলতি ২০১৭-১৮ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্রও অনুষ্ঠিত হবে।