সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, নব্বইয়ের দশক থেকে বৈশাখে গ্রামের হালখাতার হাওয়া ছড়াতে থাকে শহরে, জড়াতে থাকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। লোকজ মেলা রূপ নেয় জাতীয় উৎসবে। ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলছে বাণিজ্য, ফ্যাশনে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। পহেলা বৈশাখের ছোঁয়া লেগেছে পোশাকে, খাওয়াদাওয়ায়, আপ্যায়নে।
সম্রাট আকবরের পথ ধরে বৈশাখ-চৈত্রে জাতীয় বাজেট দেওয়া সম্ভব না হলেও রাজকোষ ভরার দায়িত্বে থাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এগোচ্ছে করদাতাদের নিয়ে হালখাতার আয়োজনে। আকবরের সময় চৈত্রের শেষ দিনের মধ্যে খাজনা, মাসুল পরিশোধকারীদের পহেলা বৈশাখে মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। নববর্ষের দিনে ছুটি থাকায় গতকাল চৈত্রসংক্রান্তিতে করদাতাদের মিষ্টি খাইয়েছে এনবিআর।
ঢাকার প্রধান প্রধান ব্র্যান্ড তাদের উৎপাদিত পণ্যে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করেছে। টিভি, ফ্রিজ, এসি, মোবাইল ফোনসেট, জামা-কাপড়, জুতা, খেলনা, গৃহস্থালির সামগ্রী ও খাদ্যপণ্যের ওপর ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নববর্ষে পণ্য বিক্রি ছাড়াও কম্পানির লোগোসহ কাগজের তৈরি হাতপাখা বিতরণ, কনসার্ট, স্পনসরশিপের মাধ্যমে বিজনেস হাউসগুলো দর্শক-ক্রেতার কাছে হাজির হচ্ছে যার যার পণ্য ও সেবা নিয়ে। এর পুরোটাই উৎপাদিত হচ্ছে দেশের ভেতরেই।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা জানান, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ ধরেই কেনাকাটা ছিল তুঙ্গে। ফুটপাতের দোকান থেকে নগরীর বিলাসবহুল মলগুলোতে মানুষ ভিড় করেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একসময় গ্রামে উৎপাদন হওয়া বৈশাখী মেলার পণ্যগুলো এখন তৈরি করছে শহুরে দক্ষ কম্পানিগুলো। নানা কম্পানি ও সংগঠন নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোগোসংবলিত বিশেষ কার্ড ছাপিয়ে শুভেচ্ছা বাণী বিতরণ করছে। ব্যক্তি, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রচলন ঘটেছে বৈশাখে জামা-কাপড় কিংবা মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, মিষ্টির মিশেলে গিফট বক্স। কেউ কেউ আবার বাঁশ বা বেতের ঝুড়িতে ভরে পাঠিয়েছে নববর্ষের উপহার।
ফলে বৈশাখ ঘিরে এখন বিপুল অঙ্কের অর্থের লেনদেন হচ্ছে গ্রাম থেকে শহরে, ফুটপাত থেকে বিলাসবহুল মলগুলোতে। টাকার অঙ্কে এ পরিমাণ কত হবে, তার কোনো হিসাব নেই। তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ধারণা, ঈদুল ফিতরের পর পহেলা বৈশাখকে ঘিরেই সবচেয়ে বেশি অর্থের লেনদেন হয় কেনাকাটায়, যা অন্য দুই বৃহৎ উৎসব ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজার কেনাকাটার চেয়ে অনেক বেশি।