ডিএমপি নিউজঃ আমরা যখন স্বাধীনতা ফিরে পেলাম তখন বেশ মূল্য দিতে হয়েছিল আমাদেরকে। জীবন দিতে হয়েছে ৩০ লাখ শহীদের, সম্ভ্রম হারিয়েছিল ২ লাখ মা-বোন। বহু ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলাদেশ। আমাদের স্বাধীনতা যেমন ছিল রক্তপিচ্ছিল, ঠিক তেমনিভাবে গৌরবেরও। দেখতে দেখতে কেটে গেলো ঘটনা বহুল ৪৭ টি বছর। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের গৌরব অর্জন করেছে।
বেড়েছে আমাদের মাথাপিছু আয়, বেড়েছে বৈদেশিক ডলারের রিজার্ভ। সরকার হ্রাস করেছে শিশু মৃত্যুর হার। আমাদের গড় আয়ু ও মানব সম্পদের সূচকও অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। অর্থনৈতিক ঝুকি অনেক কম হওয়ায় বেড়েছে আমাদের বিনিয়োগ। সমৃদ্ধশালী হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। ধারাবাহিকভাবে আমাদের জিডিপি ৭ এর উপরে। বিদেশ থেকে আমাদের আসছে প্রচুর পরিমাণ রেমিটেন্স।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মতে, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।
এ এক অনন্য বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাতে হলে জাতিসংঘের তিন শর্ত পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশ একইসাথে তিন শর্তের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যুক্ত হলো উন্নয়নশীলের কাতারে। তাও আবার স্বাধীনতার মাসে। তাই, স্বাধীনতা শব্দটিও যেন ধরা দিলো নতুন করে নতুন একঝাঁক স্বপ্ন নিয়ে। বাংলার উদ্যমী আর স্বপ্নবিলাসী ষোলো কোটি মানুষের এই অর্জন ধরে রাখতে আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার পরবর্তিকালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে এক তলা বিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করেছিলেন। দেখে যান মি. কিসিঞ্জার এই তলা বিহীন ঝুড়ির তলাটা কতটুকু শক্ত হয়েছে। সে সময়ের এই তলা বিহীন ঝুড়ির দেশ বাংলাদেশকেই এখন উন্নয়নের রোল মডেল মানেন বিশ্ব মোড়লরা। যার আনুষ্ঠানিক সুপারিশ মিলেছে এ বছর। কারণ, প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশের জাল ছিঁড়ে যোগ্যতা মিলেছে উন্নয়নশীলের কাতারে সামিল হবার।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশে যেসব খাতে বিশেষ অর্জন দেখিয়েছে তার মধ্যে নারী ও শিশু উন্নয়নে অর্জন, নারীর ক্ষমতায়নে অর্জন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়নে অর্জন, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ, বিদ্যুৎখাতে সাফল্য, শিক্ষাখাতে অর্জন, স্বাস্থ্যসেবায় সাফল্য, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের অর্জন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় অর্জন ও মন্দা মোকাবেলায় সাফল্য।
মাথাপিছু আয়, মানব উন্নয়ন সূচক এবং কম অর্থনৈতিক ঝুঁকি–এই তিন সূচকেই একযোগে উন্নতি করে বাংলাদেশ তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্বকে। তাই স্বাধীনতার মাসে এটি কেবল একটি অর্জন নয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। সাবাশ বাংলাদেশ, সাবাশ এদেশের ষোল কোটি মানুষ। আজ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের লাইনটি মনে পড়ে যায় ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’।