ডিএমপি নিউজঃ স্মৃতি আছে বলেই অতীত আমাদের ব্যক্তি সত্তায় বসবাস করে। অতীত না থাকলে বর্তমানের কোনো অস্তিত্ব থাকতো না। এতে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও লুপ্ত হয়ে যেত। স্মৃতি, সত্তা ও ভবিষ্যত এই তিন সূত্রে রচিত হয় প্রকৃতপক্ষে স্মৃতি। স্মৃতির পাতা ওল্টালে সকলের মানসপটে ভেসে ওঠে অজস্র স্মৃতি। আর ভেসে ওঠাই স্বাভাবিক। জীবনের সিংহভাগ সময় ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এখন পড়ন্ত বেলা। জীবন কবে নদী থেকে সাগরে বিলীন হবে সেই অপেক্ষা মাত্র।
বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার), চুয়াডাংগা জেলার আলমডাংগা উপজেলার নওদাবন্ডবিল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোঃ শওকাত আলী ছিলেন সৎ ব্যবসায়ী। মাতা সুফিয়া খাতুন সুগৃহিনী। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।
ছোটবেলায় ফুটবল খেলার প্রতি অনেক ঝোঁক ছিল। সে কারণে বাবার বকুনি শুনতে হয়েছে। আশ্রয়স্থল ছিল মা। মায়ের আদর আর শাসন ছিল স্বর্গসুখের। ফুটবল ছাড়া ভলিবল, ডাঙ্গুলি, দাড়িয়াবাধা, কানামাছি, হাডুডু, মার্বেল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি যে খেলাই হতো, তাতেই মহা আনন্দে অংশ নিতেন। বলতে হয় শৈশব কেটেছে মহা আনন্দে, মহা উৎসাহে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে স্নাতক সম্পন্ন করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে সায়েন্টেফিক অফিসার পদে চাকরিতে যোগদান করেন। বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেছিলেন-বাবা সব সময় বলতেন মানুষের সেবা করতে। আল্লাহপাকের অশেষ রহমত সে সুযোগ আমার সৃষ্টি হয়ে যায় বিসিএস (পুলিশ) ১৯৮৯ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগদান করে। পুলিশের কাজ যেহেতু সরাসরি জনগণের সঙ্গে। বাবা মায়ের আদেশ ছিল বিপদে যেন মানুষের পাশে দাঁড়াই। সাহায্য করি। আমি শুকরিয়া আদায় করি, পরম করুনাময়ের নিকট। আল্লাহপাক আমাকে এমনি একটি মানবিক পেশায় নিয়োজিত করেছেন।
পুলিশের চাকরিতে আশার পূর্বে আমারও পুলিশভীতি ছিল। বাংলাদেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ছিল মূলত চরমপন্থীদের ঘাঁটি। আমার বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। আলমডাঙ্গায় দিনে দুপুরে অনেক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও অনেক ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কথা শুনেছি। পুলিশের সম্পর্কেও অনেক মানুষের ভুল ধারণা আছে। আমি দেখেছি, শুনেছি যে ব্যক্তি কখনও থানা-পুলিশ করেনি এমন ব্যক্তিও পুলিশকে ভয় পায়। কারণগুলো খুবই ছোটখাটো। সাধারণ ডায়েরি, মারামারি, জমিজমা, বিয়ে ছাড়াছাড়ি সংক্রান্ত মামলাগুলোই এমন ভীত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ হয়রানি হচ্ছে। নিরপরাধ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মূলত: এর জন্য দায়ি সমাজের মধ্যস্বত্বভোগী রক্তচোষা মানুষগুলো। সাধারণ নিরিহ মানুষগুলো দালাল, বাটপাড়দের খপ্পরে বা কবলে পাড়ে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। বিচার পেতে বিলম্ব হয়। আমার মতে এ ক্ষেত্রে পুলিশের নজরদারি এসপি বা অ্যাডিশনাল এসপির তদারকিতে থাকা দরকার। যে কোন বিচার কাজ ন্যায় হোক অন্যায় হোক একপক্ষ অসন্তুষ্ট হবেই। যার কারণে একটা পক্ষ সব সময় পুলিশকে দেখতে পারে না বা খারাপ চোখে দেখে। এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে পথসভা, জুম্মার দিন মসজিদে, পূজায় মন্দিরে আলোচনা করে পুলিশভীতি দূর করতে হবে। পুলিশ ভীতি কমাতে হবে। পুলিশ হবে মানবিক। জনগণ যেমন সকল ক্ষমতার উৎস তেমনি পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু। আমরা যারা সিনিয়র লেভেলে আছি, আমাদের চেষ্টার কোনো ক্রটি নেই, সব সময় চেষ্টা করা হয় ভালো করার। ভালো আচরণের। ভালো আচরণের মাধ্যমেই পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু। জুনিয়রদের সবসময় পুলিশিংকরালে চলবে না। স্নেহ করতে হবে। ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে। স্বীকৃতি দিতে হবে। পুরস্কৃত করতে হবে। সর্বোপরি বলবো জনগণেরও উচিত আন্তরিকতার সঙ্গে পুলিশের পাশে থাকা। গ্রামে যে প্রবাদ আছে- ‘বাঘে ছুঁলে এক ঘা পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা’ এ প্রবাদ আর পুলিশ শুনতে চায় না। মানতে চায় না। মানতে রাজি না।
চাকরিজীবী মাত্রই কর্মক্ষেত্রে সফলতা ও স্বীকৃতি চায়। এ ক্ষেত্রে আমি নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান পুলিশ কর্মকর্তা মনে করি। চাকুরি জীবনে ধারাবাহিকভাবে সহকারী পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত ডিআইজি, কমিশনার সিএমপি, ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ, ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ, এটিইউ প্রধান, সিআইডি প্রধান এবং ডিএমপির কমিশনার পদে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমি মনে করি কর্মক্ষেত্রে পেশাদার বা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, মেধা, দক্ষতা, আচরণ, কুশলী ও হৃদ্যতাপূর্ণ সংযোগায়নের ওপরই নির্ভর করে কর্মজীবনের সফলতা। আমি ব্যক্তিগতভাবে পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনার এ দুটি পদে চাকরি বেশী উপভোগ করেছি। এখানে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ বেশি। সকল ক্ষেত্রেই বিপরীত চিত্র আছে। আমি আমার সাধ্যমতো মানুষের জন্য কাজ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, করি। আর সে কারণে বিভিন্ন পদে চাকরি করে অনুজদের শ্রদ্ধা সহকর্মীদের সহযোগীতা আর উর্ধ্বতনের স্নেহ পেয়েছি। সে কারণে আমি এ পেশায় সফলতা পেয়েছি। চাকরিতে সন্তুষ্ট এবং গর্বিত হয়েছি।
আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন, বিগত কুড়ি বছর আগের পুলিশ প্রশাসন আর আজকের পুলিশ প্রশাসন এক নয়। সময় এবং বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। সমাজ আর বাস্তবতার নিয়মে সমাজে অপরাধের ধরণ বিস্তৃত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে পুলিশের প্রতি জনপ্রত্যাশাও বেড়েছে অনেক। অপরাধের ধরণ, বিষয়, অপরাধের দিক বিবেচনায় এনে পুলিশেও ব্যাপক উন্নয়ন ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের থেকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, গুম, খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ অনেক কমেছে। পুলিশের মেধা, দক্ষতা, দক্ষ পরিচালনা, সক্ষমতা, যানবাহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। যুগপোযোগী করা হয়েছে। সরকার নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পুলিশের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। বলতে দ্বিধা নেই এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পুলিশের সুযোগ সুবিধা আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য সরকারের প্রতি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আগামির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ, চৌকস, আধুনিক পুলিশ বাহিনী তৈরি করতে হবে। এছাড়া বেতন-ভাতাসহ আনুষ্ঠানিক সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।
আমাদের বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবনে ঈদ, পূজা মানেই এক মহা আনন্দ। আপনারা দেখেছেন সরকারি ছুটির দিনগুলো বিশেষ করে জাতীয় দিবস, উৎসবের আনন্দে অন্যান্য পেশাজীবীরা থাকে মহা আনন্দে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, পাড়া-পড়শিদের নিয়ে মহা আনন্দে ছুটি উপভোগ করে। অথচ এই বিশেষ দিনগুলোয় পুলিশকে ব্যস্ত থাকতে হয় সকলের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। চাকুরির প্রথম থেকেই পুলিশ বাহিনী এ নিয়মের প্রতি অভ্যস্থ হয়ে যায়। প্রথমত: মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বিষয়টি মেনে নিতে পারতো না। ধীরে ধীরে পরিবারের সকলেই পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে বুঝতে পারে এবং মেনে নেয়। এভাবেই দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার মধ্য দিয়েই পুলিশ বাহিনী আনন্দ খুঁজে পায়।
পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে জঙ্গি দমনে। দেশের প্রতিটি সংকটে নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্ভীক পুলিশ সদস্যরা সর্বদা কাজ করেছে। দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রতি পাঁচ বছর পর পর দেশে যে অরাজকতার সৃষ্টি হয়, সে সময় পুলিশ বাহিনী সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত থাকে। কিন্তু দু:খের বিষয় একটি পক্ষ এ সময় পুলিশের বিরাগভাজন হয়ে থাকে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটার রাষ্ট্রীয়ভাবে মিমাংসা জরুরী। আমি আমার দায়িত্ব পালনে জঙ্গিদমনে সরাসরি নেতৃত্ব প্রদানের জন্য এবার বিপিএম সাহসিকতা এবং ধারাবাহিকভাবে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য দু’বার বিপিএম সেবা পদক পেয়েছি। সে জন্য আমি সর্বমহলের নিকট কৃতজ্ঞ।
সত্যের সন্ধানে নির্ভীক, দুর্বার দুর্জয় পুলিশ। ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর। প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আছে। থাকবে। আর পুলিশের কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, সংকট, ঝুঁকি, চ্যালেঞ্জ আরো অনেক বেশি। কর্মক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তা, কর্মকৌশল ও সাহসের মাধ্যমে একজন কর্মকর্তার সফলতা প্রকাশ পায়। হতোদ্যম হলে পরাজয়, নিশ্চিত। আজকাল তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর অনেক অপরাধ হচ্ছে। আর সেসব চিন্তা করে পুলিশ প্রশিক্ষণের মান ও সিলেবাস আধুনিকমানের করা হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন জাতীয় দূর্যোগ মোকাবিলায় মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। বিশেষ করে করোনা অতিমারীর সময়ে মানবিক পুলিশিং, পুলিশ ব্লাড ব্যাংক, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, হাসপাতাল সেবা, ৯৯৯ জরুরী সেবা, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, বিট পুলিশ বা কমিউনিটি পুলিশিং, থানা পর্যায়ে মামলা, সাধারণ ডায়েরী মনিটরিং যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
পুলিশ প্রশাসনে নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে মিশ্র ধারণা আছে তার অনেকটা অবসান হয়েছে। আপনারা জানেন, ড. জাবেদ পাটোয়ারী স্যার আইজিপি থাকার সময় থেকেই পুলিশের নিয়োগে স্বচ্ছতা এসেছে। পরবর্তীতে সদ্য বিদায়ী অসাধারণ মেধাবী, সাহসী, দক্ষ, ডায়নামিক আইজিপি ড. বেনজীর স্যার এটাকে আমূল পরিবর্তন করেছেন। পুলিশের নিয়োগে এনেছেন যুগান্তকারী পরিবর্তন। পদোন্নতি সকল কর্মক্ষেত্রে খুবই জরুরী। এ ক্ষেত্রেও ড. বেনজীর আহমেদ স্যার ভিন্ন পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয়ভাবে পদোন্নতি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। এখন পদোন্নতিতে অনিয়ম ও দূর্নীতির কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে। নিষ্ঠার সঙ্গে নতুন প্রবর্তিত পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই জরুরী। উপরের পদের তুলনায় নিম্নপদের পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ায় কাজটা অনেক কঠিন। তবে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলে ভুল বোঝাবুঝি কম হয়। ফলাফল ভালো হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২৫ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ থেকে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। সেদিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল সেকেলে ‘থ্রি নট থ্রি রাইফেল’ নিয়ে। এখানে থ্রি নট থ্রি রাইফেল বিষয় নয়, যুদ্ধে বীর সেনানিদের ছিল দৃঢ় মনোবল আর ছিল সুগভীর দেশপ্রেম। ইতোমধ্যে ঢাকা রেঞ্জের অনুজ ডিআইজি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা হয়েছে ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও মুক্তিযুদ্ধের সত্য ও সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের অতুলনীয় অংশগ্রহণ আমাদের বাঙালির অহংকার। এ অহংকার বাংলাদেশ পুলিশের। এ অহংকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে সেই সকল বীর পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে আমি আমার পরম আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর চাকরি অনেক চ্যালেঞ্জের। অনেক ত্যাগের। অনেক ঝুঁকির। এছাড়া জেনে-বুঝেই দেশের জনগণের সেবায় এসেছি। আর এ পেশায় কাউকে না কাউকে আসতে তো হবেই। আমরা রাতের পর রাত জেগে, চোখের ঘুম হারাম করে, ঘন্টার পর ঘন্টা ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে, পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে দেশের জানমালের নিরাপত্তা দিতে জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো সত্তা নয়। আমরা আপনার ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-পড়শি সর্বোপরি এ দেশেরই সন্তান। বাংলাদেশের পুলিশ সম্মাণিত জনগণের নিকট থেকে আরো একটু বেশি ইতিবাচক মূল্যায়ন আশা করে। ইতিবাচক আচরণ আশা করে।
আপনি বিপদে পড়লে অথবা অপরাধের শিকার হলে, একমাত্র পুলিশই আপনার পাশে দাঁড়ায়। আইন প্রয়োগ করতে গেলেই পুলিশ সমালোচনায় পড়ে। যা কোন অবস্থায়ই কাম্য নয়। আইনের প্রয়োগ নয়, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠুক আমাদের আগামী প্রজন্ম। পুলিশ হবে দক্ষ, সাহসী, সৎ, সুশৃঙ্খল ও জনবান্ধব। পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু। আর সাথে সাথে আমরা চাই মানবিক পুলিশ। আমরা সবাই ভালো কাজে পুলিশের পাশে থাকি। সবশেষে আমি, আপনি, আমাদের সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলি। সমাজে ভালো মানুষের সৃষ্টি করি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আমরা সকলে স্ব-স্ব স্থান থেকে যথাযথ ভূমিকা পালন করি। এই হোক আমাদের আজকের অঙ্গিকার।
লেখক : মোঃ সহিদুল ইসলাম
বিশিষ্ট ব্যাংকার।