ডিএমপি নিউজঃ দুই বছর তদন্ত শেষে আজ হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
অভিযুক্ত আট জন হচ্ছে- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী (টাঙ্গাইল হতে গ্রেফতার), আসলাম ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র্যাশ (নাটোর হতে গ্রেফতার), সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে গ্রেফতার), হাদীসুর রহমান সাগর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে গ্রেফতার), রাকিবুল হাসান রিগ্যান (ঢাকার কল্যাণপুর হতে গ্রেফতার), মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে গ্রেফতার), মামুনুর রশিদ রিপন (পলাতক) ও শরীফুল ইসলাম খালিদ (পলাতক)। পলাতকদের গ্রেফতারে আদালতে ওয়ারেন্ট অব এ্যারেস্ট এর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
আজ ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বেলা ১২টায় এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিং-এ হলি আর্টিসান হামলায় চার্জশীট দাখিল সম্পর্কে বিস্তারিত জানান ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম-বার, পিপিএম-বার।
সিটিটিসি’র প্রধান বলেন, হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা তদন্ত শেষে আমরা এই নৃশংস হামলার সাথে ২১ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। তার মধ্যে হলি আর্টিসান হামলা সরাসরি জড়িত ৫ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। নিহতরা হলো-রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ।
পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে আরও নিহত হয় ৮ জন সন্ত্রাসী। তারা হলো- তামিম চৌধুরী, সরোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান, তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদ, নূরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকোলেট, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ও রায়হান কবির ওরফে তারেক।
এই মামলায় আমরা জীবিত গ্রেফতার করতে পেরেছি ৬ জনকে। গ্রেফতারকৃত ৬ জনই আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। অন্য ০২ জন অর্থ্যাৎ মামুনুর রশিদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালিদ এখনও পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার কারণ সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানো। পাশাপাশি তারা এই ঘটনার মাধ্যমে সরকারকে কোনঠাসা করে দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে সরকার যাতে চাপের মুখে পরে, ইনভেস্টররা যাতে দেশ ছেড়ে চলে যায় এবং এক্সপোর্টাররা যাতে বাংলাদেশে না আসে। এছাড়াও বাংলাদেশে যে সমস্ত উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চলছিল তা যাতে ব্যহত হয়। এক পর্যায়ে সরকারে যখন জঙ্গিদের ধরতে না পেরে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন চালাবে তখন তারা সাধারণ মানুষকে রিক্রুটিং করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে লেলিয়ে দিবে। তদন্তে আমরা হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলার পেছনে এই কারণ উদঘাটন করতে পেরেছি।’
হলি আর্টিসান বেকারিকে টার্গেট করার কারণ সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গুলশান বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, হলি আর্টিসান বেকারির নিজস্ব তেমন কোন সিকিউরিটি ব্যবস্থা ছিল না, এখানে হামলা চালালে অধিক সংখ্যক বিদেশী নাগরিককে একসাথে পাবে, যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা ভালো ছিল। মূলত এ সমস্ত কারণে সন্ত্রাসীরা হলি আর্টিসানকে বেছে নেয়।’
হলি আর্টিসান হামলার চার্জশীট দিতে এত দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সিটি প্রধান বলেন, এই মামলাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হামলায় যারা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল তারা অভিযানে নিহত হয়েছিল। আমরা নিজস্ব ও বিশ্বস্ত গোয়েন্দা বা গুপ্তচরদের দেয়া তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও যাচাই করে নির্ভুলভাবে এগিয়ে গেছি। এই মামলা তদন্তকালে আমরা ১৭ জন সার্ভাইভারের জবানবন্দি বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে নিয়েছি। মামলার সাথে সম্পৃক্ত ৭৫টির মত আলামত আদালতে দাখিল করেছি। এই মামলা নির্ভুল তদন্তের জন্য ২১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে ১৪৯ জন সাক্ষী হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ১লা জুলাই রাজধানীর গুলশান-২ এ ৭৯ রোডে অবস্থিত হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা চালায় ০৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী। এতে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করে ১৭ জন বিদেশী নাগরিক, ০৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও ডিএমপি’র ০২ জন পুলিশ অফিসারকে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৩০ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন আনসার ও ৫ জন সাধারণ নাগরিক।