২৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় হাত ছাড়া জন্ম নিয়েছিল ছোট্ট মেয়ে জেসিকা কক্স। প্রিয় সন্তানের হাত না থাকায় জেসিকার বাবা-মা যে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলেন সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজের হাত না থাকার অভাবটা বুঝতে পারেন জেসিকা নিজেও। কিন্তু ২৫ বছর পর আজ জেসিকার মনে নেই কোনো কষ্ট। তার বাবা-মাও সন্তানের হাত না থাকার ব্যথা ভুলে মেয়েকে নিয়ে বরং এখন গর্ববোধ করছেন। মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় অঙ্গ হাত ছাড়াই জেসিকা আজ নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। হাত ছাড়া শুধু পা দিয়ে তিনি চালাতে পারেন বিমান। জেসিকার সেই প্রতিভার স্বীকৃতি দিয়েছে মার্কিন বিমান কর্তৃপক্ষ।
এর আগে আমরা দেখেছি হাত ছাড়া পা দিয়ে লিখতে, টাইপ করতে, গাড়ি চালানোসহ নিত্যদিনের সব কাজ করতে। কিন্তু অ্যারিজোনার মেয়ে জেসিকা কক্স রীতিমতো বিমান চালিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এক সময় নাচ করতেন জেসিকা। এর বাইরে কুংফুতে ব্ল্যাক বেল্টও অর্জন করেছেন। নিজের অদম্য দৃঢ়বল সম্পর্কে জেসিকা বলেন, আমি কখনো বলি না যে, আমি করতে পারবো না। আমি শুধু বলি, হয়তো আমি এখনো বিষয়টি নিয়ে সেইভাবে কাজ করতে পারিনি। জন্মের পর যখন আমি বুঝতে শিখেছি যে আমার হাত নেই তখন থেকে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি। জন্মের পর বাবা-মা খুবই হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু তারাও আমাকে কখনো বুঝতে দেননি যে, আমার দুটি হাত নেই। অন্যরা আমার দিকে একটু অন্যভাবে তাকাতো এবং তাদের কেউ কেউ কখনো কখনো নেতিবাচক মন্তব্যও করতো। কিন্তু আমি তাদের নেতিবাচক মন্তব্যকে সব সময় ভালো মন্তব্য হিসেবে দেখতাম। কখনো কষ্ট পেতাম না। এটাই আমাকে লড়াকু করে তুলেছে।
জেসিকা বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার মধ্যে বিমান চালানো সম্পর্কে এক ধরনের ভীতি এবং আকর্ষণ দুই-ই কাজ করতো। তবে তিন বছর আগে যখন একজন পাইলট আমাকে বিমান চালানো সম্পর্কে উত্সাহিত করলেন তখন থেকে আমার ভীতি কেটে গেছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, উনি হয়তো আমার সঙ্গে মজা করছেন। কিন্তু পরবর্তীতে বুঝতে পারি তিনি সত্যি সত্যি বিমান চালানো শেখানোর বিষয়ে আন্তরিক। তিনি আমাকে বিমান চালনা শেখানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। এটিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। তিন বছরের প্রচেষ্টায় তিনি এখন হালকা বিমান চালনার লাইসেন্স পেয়েছেন। হাত ছাড়া বিমান চালনা করা খুবই বিপজ্জনক বলে অনেকেই তাকে নিরুত্সাহিত করলেও দমে যাননি জেসিকা কক্স। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি জেসিকা বলেন, ‘নিজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার অনেক উপায় রয়েছে। নিজের মধ্যে অদম্য স্বপ্ন আর শক্তি থাকলে সব কিছুই জয় করা সম্ভব। তোমরাও যে পারবে, তার প্রমাণ আমি নিজে।’- দ্য টেলিগ্রাফ