ডিএমপি নিউজ: বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর লালবাগ থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- সোহেল ঢালী, সুনীল দাস, আওয়াল, হৃদয়, হুমায়ুন, স্বাধীন সরদার ও রনি ওরফে কুত্তা রনি। এসময় তাদের হেফাজত থেকে চোরাই ১০টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
আজ বুধবার (১০ আগস্ট ২০২২) লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ জাফর হোসেন তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে গাড়ি চুরি বা মোটরসাইকেল চুরি অপরাধের মধ্যে অন্যতম একটা অপরাধ। প্রায়শই দেখা যায়, কোন মসজিদ, মার্কেট বা অফিসের সামনে মোটরসাইকেল রেখে চালকরা ভিতরে ঢুকে কিন্তু বের হয়ে দেখতে পায় যে মোটরসাইকেল নাই। তেমনি এক ঘটনায় গত ২৪ জুলাই, ২০২২ তারিখে লালবাগ কেল্লা সংলগ্ন স্বপ্ন সুপার শপের সামনে থেকে এনএসআইয়ের ডিডি মোঃ রেজাউল করিমের মোটরসাইকেল চুরি হয়। ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে লালবাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়।
তিনি আরও বলেন, মামলাটি তদন্ত শুরু করে এসি লালবাগ জোন কে এম রায় নিয়তি এর নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম। মামলা তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখা যায় দুইজন ব্যক্তি মোটরসাইকেলটি চুরি করেছে। প্রথমে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে সোহেল, সুনীল এবং আওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হৃদয়, হুমায়ুন, স্বাধীন সরদার ও রনি ওরফে কুত্তা রনিকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১০টা মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সোহেল, সুনীল এবং আওয়ালই মূলত চুরির কাজটি করে। তাদের কাছে থাকে ‘মাস্টার কি’। হৃদয়, হুমায়ুন, স্বাধীন ও রনি অভ্যাসগতভাবে চোরাই মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় করতো। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এ চক্রের অপরাধের ধরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা প্রথমে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে রেকি করে এবং চালকদের উপর নজর রাখে। যেসকল মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত লক বা তালা থাকে না বা লক একটু দুর্বল থাকে সেগুলো টার্গেট করে। ‘মাস্টার কি’ দিয়ে লক খোলে ওরা নিজেরাই মোটরসাইকেল চালিয়ে নিয়ে চলে যায়। তারা চোরাই মোটরসাইকেল মাওয়া ঘাট পার হয়ে হৃদয়, হুমায়ুন, স্বাধীন সরদার ও রনিদের কাছে ২০/২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। ওরা আবার সেই মোটরসাইকেলগুলো ৩০/৩৫ হাজার টাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা একটা সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। তারা ঢাকার জুরাইন এলাকা থেকে মাস্টার কি সংগ্রহ করে। তারা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজে জড়িত হয়। এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
গ্রেফতারকৃতদের লালবাগ থানার রুজুকৃত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে মর্মে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলগুলোর ইঞ্জিন ও চেসিস নং –
১। একটি ছাই রংয়ের টিভিএস আরটিআর মোটরসাইকেল (বর্ণিত মামলার চোরাই মোটরসাইকেল), যার ইঞ্জিন নং- C1D5098118 এবং চেসিস নং MD624HC15F2A52460,
২। একটি নীল রংয়ের নাম্বার প্লেটবিহীন ইয়ামাহা ফেজার মোটরসাইকেল, যার চেসিস নং ME1RG4444H0003850, ইঞ্জিন নং- G3J3E0021988,
৩। একটি সাদা রংয়ের নাম্বার প্লেটবিহীন ইয়ামাহা ফেজার মোটরসাইকেল, যার চেসিস নং ME1RG4444BJ0031662, ইঞ্জিন নং- G3J3E0396625,
৪। একটি লাল রংয়ের নাম্বার প্লেটবিহীন টিভিএস আরটিআর মোটরসাইকেল, যার চেসিস নং MD624HC11D2H30151, ইঞ্জিন নং- C1L3070812,
৫। একটি নীল রংয়ের নাম্বার প্লেটবিহীন টিভিএস আরটিআর মোটরসাইকেল, যার চেসিস নং MD634KE40J2A60418, ইঞ্জিন নং- 0E4AJ2162180,
৬। একটি লাল রংয়ের পালসার মোটরসাইকেল, যার চেচিস নং MD2A11CY4HWM90504, ইঞ্জিন নং-DHY WHM32399, রেজিস্ট্রেশন নং-ঢাকা মেট্রো-ল- ৩৩-০৬৫৭,
৭। একটি লাল রংয়ের নাম্বার প্লেটবিহীন টিভিএস আরটিআর মোটরসাইকেল, যার চেসিস নং MD624HC15D2G28416, ইঞ্জিন নং- C4K3074761,
একটি লাল-কালো রংয়ের নাম্বার প্লেটবিহীন পালসার মোটরসাইকেল, যার চেসিস নং MD2DHDHZZTCD25698, ইঞ্জিন নং-DHGBTD19180.
৯। একটি কালো রংয়ের নাম্বার প্লেটবিহীন হর্নেট মোটরসাইকেল, যার চেসিস নং PSOKC2390JH106343, ইঞ্জিন নং- KC23E-7-6006539,
১০। একটি নীল রংয়ের নাম্বার প্লেটবিহীন টিভিএস আরটিআর মোটরসাইকেল, যার চেসিস নং ও ইঞ্জিন নং মুছে ফেলা হয়েছে।