ব্রেক্সিট ইস্যুতে ম্যান্ডেট নিতেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ভোটারদের কাছে পার্টির চেয়ে বড় ইস্যু হয়ে উঠছে ব্রেক্সিট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বের হবে কিনা অর্থাত্ ব্রেক্সিট কার্যকর হবে কিনা সেই ইস্যুতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে চার বছরের এক বালক। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি লেবার পার্টির চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স ও আল জাজিরা’র
মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুই দলের মধ্যে
নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বািতা হবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি (টোরি পার্টি) এবং জেরেমি করবিনের লেবার পার্টির মধ্যে। এছাড়া আরো ছোটো দল রয়েছে যারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এদের মধ্যে কেউ ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থি ও কেউ ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী দল হিসেবে পরিচিত। টোরি ও লেবার পার্টি রাজনৈতিক সংকটের সমাধান তথা ব্রেক্সিট ইস্যুতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। বিশেষ করে বাজেটে কাটছাট ইস্যুও আলোচনায় স্থান পাচ্ছে।
ব্রেক্সিটই বড় ইস্যু
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও সেগুলো ভোটের ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর আগে বারবার চেষ্টা করেও পার্লামেন্টে বিল পাশ করাতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সেজন্যই বাধ্য হয়ে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন বরিস। অনেকে এই নির্বাচনকে ‘ব্রেক্সিট নির্বাচন’ বলেও আখ্যায়িত করছেন। বিরোধী লেবার পার্টি ইইউপন্থি। দলটি ব্রেক্সিট চায় না। তবে জেরেমি করবিন বলেছেন, নির্বাচনে জিতলে ২০১৬ সালের মতো আরেকটি গণভোটের আয়োজন করা হবে। এতেই ভোটাররা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমেও ব্রেক্সিট সমস্যার সমাধান হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না।
নির্বাচনের খুটিনাটি
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে ৬৫০ টি আসন রয়েছে। সরকার গঠনের জন্য ৩২৬ টি আসনে জয় পেতে হবে। উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডস নির্বাচিত নয়। কিছু প্রধান দল এখানে প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়। কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে। তবে বেশি ভোট পাওয়া দল ছোটো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে জোট সরকার গঠন করতে পারে। সরকার গঠিত হয় ৫ বছরের জন্য। স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোট শুরু হবে এবং রাত ১০ টায় শেষ হবে। শুক্রবার ফলাফল ঘোষণার কথা।
এগিয়ে টোরি দল
ইউগভ নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন টোরি দল ১০ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছে। দলটি ৩৫৯ আসন এবং লেবার পার্টি ২১১ আসন পেতে পারে। তবে আইসিএমের জরিপে দেখা গেছে, বরিসের টোরি দল মাত্র ৬ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছে। সংস্থাটি জানায়, টোরি দলের প্রতি সমর্থন আগের ৪২ ভাগই আছে। তবে লেবার পার্টির প্রতি এক শতাংশ বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়েছে। আর ইইউপন্থি লিবারেল ডেমোক্র্যাটসের এক পয়েন্ট কমে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ইইউবিরোধী ব্রেক্সিট পার্টির আগের ৩ শতাংশই রয়েছে। ৬ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপ চালায় আইসিএম। মার্কিন প্রভাবশালী মিডিয়া সিএনএন জানিয়েছে, ২২ টি আসনে জয়-পরাজয় সরকার গঠনে প্রভাব ফেলবে।
আলোচনায় চার বছরের বালক
চার বছরের এক অসুস্থ বালক নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে। ডেইলি মিরর জ্যাক উইলিমেন্ট বার নামের বালকের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। দেখা যাচ্ছে, লিডস জেনারেল ইনফার্মারি হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়ে আছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ঐ বালক। সে বিছানা পাচ্ছে না। এটা প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বরিস জনসন তাকে দেখতে না যাওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েন। জেরেমি করবিন বলেছেন, এটা একটা রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুর অবস্থার বড় প্রমাণ এই বালক।