সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নদীতে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকারের ঘটনায় গত ১১ দিনে ( ৯ অক্টোবর থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত) নদীতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৫ শতাধিক জেলেকে আটক করেছে নৌ পুলিশ। নৌ পুলিশের ৮ টি নৌ অঞ্চলে একযোগে প্রায় ২ শতাধিক বার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে এক হাজার জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। বাকীদের অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে জেলে নৌকা, অবৈধ জাল এবং শিকার করা মাছ। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নৌ পুলিশের এ অভিযানকে আরো জোরালো করা হয়েছে।
নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(মিডিয়া) ফরিদা পারভিন জানান, ১৭ অক্টোবর থেকে গতকাল দুপুর পর্যণÍ নৌ পুলিশের ৮ টি অঞ্চলে প্রায় ৩ শতাধিক জেলেকে আটক করা হয়েছে নদীতে মা ইলিশ শিকার করা অবস্থায়। গত ১৭ এবং ১৮ অক্টোবর ৩২ টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৮ টি নৌ অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২২ কোটি টাকার অবৈধ জাল, ৪০ টি জেলে নৌকা এবং ২০লাখ টাকারও বেশি মা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। ১৯২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
নৌ পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ৯ অক্টোবর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত দেড় শতাধিক ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়েছে। এসব অভিযানে ৬০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ২ কোটি মিটিার অবৈধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যের মাছ জব্দ করে তা বিভিন্ন এতিম খানা, মাদ্রাসায় বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আড়াই শতাধিক নৌকা, ট্রলার এবং ব্লাকহেড জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় গত ১১ দিনে ১৫ শর বেশি জেলে আটক হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার জেলের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বাকীদের অর্থ দন্ড করা হয়েছে। এ পর্যণÍ আড়াই জেলের অর্থ দন্ড করা হয়েছে। দন্ডের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ রাস্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে যার পরিমান ১০ লাখ টাকার বেশি হবে।
নৌ পুলিশ সূত্র জানায়,, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের ২২ দিনে( ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর) পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীতে লাখ লাখ ডিম ছাড়ে মা ইলিশ। এসব ডিম ফুটে ইলিশের প্রজনন বাড়ে। কিন্তু অসাধু জেলেরা অবাধে মা ইলিশ শিকার করার ফলে ডিম ছাড়ার আগেই মারা পড়ে মা ইলিশ। অবাধে মা ইলিশ নিধনের কারণে ইলিশ কমে আসায় সরকার প্রতিবছর ২২ দিন (৯ থেকে ৩০ অক্টোবর) নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে। এর পর থেকে ইলিশের উৎপদান বাড়তে শুরু করে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও অবৈধভাবে মা ইলিশ শিকার করার ফলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, মৎস ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে এবার মা ইলিশ শিকার পুরোপুরি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় সম্পদ ইলিশের অবাধ প্রজনন বাড়াতে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় প্রজনন এলাকায় বিশেষ টহল শুরু করেছে নৌ পুলিশ।
নৌ পুলিশের ডিআইজি মোঃ আতিকুল ইসলাম জানান. ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষায় নৌ পুলিশ বদ্ধ পরিকর। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মেঘনা- তেতুলিয়া নদীর কয়েকটি পয়েন্টে মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। এ সময় কোটি কোটি ইলিশ মাছের উৎপাদন হয়। এ কারণে প্রজনন এলাকায় প্রচুর মা ইলিশের বিচরন শুরু হয়। কিন্তু অসাধু জেলে দাদনদারদের কারণে অনৈক জেলে অতি লোভের কারণে নদীতে অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহারের কারণে মা ইলিশ মারা পড়ে। এর ফলে ডিম ছাড়ার সুযোগ পায় না মা ইলিশ। তাই সরকার ইলিশের প্রজনন বাড়াতে প্রতিবছরের ন্যায় এ সময়টি মা ইলিশ নিধন বন্ধে নদীতে সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। নৌ পুলিশ সরকারের এ নির্দেশনা বায়স্তবায়নে কাজ শুরু করেছে। তিনি আরো জানান, নদীর সম্পদ রক্ষা, নদী এলাকায় নৌ জানের চলাফেরায় নিরাপত্তা দেওয়া, চোরা চালানসহ যেকোন অপরাধ নিয়ন্ত্রনে নৌ পুলিশ গঠন করেছে সরকার। নৌ পুলিশ নৌ পথে নিরাপত্তা, ও অপরাধ নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি নদীর সম্পদ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষার দায়িত্বও নৌ পুলিশ নিয়েছে। নৌ পুলিশ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জাতীয় সম্পদ ইলিশের প্রজনন বেড়ে গেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মা ইলিশ শিকার বন্ধে নৌ পুলিশ বদ্ধ পরিকর। তিনি নিজে এ অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে নৌ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে। অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ রফিকুল ইসলাম উত্তরাঞ্চলের দায়িত্বে দক্ষিনাঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছেনর অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ মোল্লা নজরুল ইসলাম।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতিটি অঞ্চলে একজন এসপি ও অতিরিক্ত এসপি এবং ২ জন সহকারী পুলিশ সুপার( এএসপি) নেতৃত্বে ১৩০ জন নৌ পুলিশ সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছে। প্রজনন এলাকায় নদীতে স্পিডবোর্ড, ট্রলার,সহ বিভিন্ন নৌযানের সাহায্যে দিনরাত্রি টহল দিচ্ছে নৌ পুলিশ। ঢাকা অঞ্চলের কুতুবপুর নৌ ফাঁড়ি, মাওয়া নৌ ফাঁড়ি,চর আব্দুল্লাহপুর নৌ ফাঁড়ি, গজারিয়া নৌ ফাঁড়ি, কলাগাছিয়া নৌ ফাঁড়ি ,খাককান্দা নৌ ফাঁড়ি। বৈদ্বেরাবাজার নৌ ফাঁড়ি, করিমপুর নৌ ফাঁড়ি,বঙ্গারচর নৌ ফাঁড়িতে কাজ করছে। কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে একজন পুলিশ সুপার একজন সহকারি পুলিশ সুপারসহ মোট ৩৯ জন সদস্য ভৈরব, ছলিমগঞ্জ, দবাজাইল, চানটাঘাট এবং লালপুর নৌ ফাঁড়ি অভিযানিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফরিদপুর অঞ্চেলে একজন পুলিশ সুপার, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সহ মোট ৫২ নৌ পুলিশ সদস্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। টাঙ্গাইল অঞ্চলে একজন পুলিশ সুপার, একজন সহকারী পুলিশ সুপার সহ মোট ১০০ সদস্য বাহাদুরবাদ ঘাট, চৌহালী, নগর, বঙ্গবন্ধু সেতু পূবে ও পশ্চিমে, বালহদিঘাট, ফুলছাড়ি, লক্ষীপুর, ভূয়াপুর, আবএমপি ও গোদাগাড়ি এলাকায় মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালাচ্ছে। একজন এসপি সহ মোট ১৪০ জন চাঁদপুর অঞ্চলে কাজ করছে। বরিশাল অঞ্চলে ১ জন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ৯২ জন নৌ পুলিশ সদস্য কাজ করছে। চট্টগ্রামে ১ জন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ২ জন এএসপি সহ ৫৭ জন নৌ পুলিশ সদস্য কাজ করছে। খুলনা অঞ্চলে ১ জন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ১ জন এএসপি সহ ১৩৬ জন সদস্য কাজ করছে। একটি মা ইলিশ ২২ দিনে (৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত) প্রায় ২২ লক্ষ ডিম ছাড়ে। যদি এর অর্ধেক ডিমও ফোটে এবং পরিপূর্ন মাছ হয় তাহলে ১০ লক্ষ মাছ আমরা পাব। যদি কেউ আইন অমান্য করে তাহলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।