শিশুকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীদের গণতন্ত্রের চর্চা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে আগামী ৩০ মার্চ দেশব্যাপী ২২ হাজার স্কুল ও মাদ্রাসায় স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে প্রায় ৮০ লাখ ক্ষুদে ভোটার নির্বাচিত করবে ২২ হাজার প্রধানমন্ত্রী। প্রার্থীরা ইতিমধ্যে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। স্কুলে স্কুলে ঝোলানো হয়েছে হাতে লেখা পোস্টার, তবে তা স্কুল ও মাদ্রাসার সীমানার মধ্যে।
গতকাল ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন নিয়ে ঢাকা অঞ্চলের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় প্রধান শিক্ষক, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। এই কর্মশালার আয়োজন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের ঢাকা অঞ্চল এবং ব্যানবেইস।
মাউশি অধিদফতরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব এফএম এনামুল হক, মাউশি অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান, ব্যানবেইসের পরিচালক মো. ফসিউল্লাহ, মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন প্রমুখ। শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, শিশুকাল থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা, মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন শেখাতে এই স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্বের পাশাপাশি শিক্ষকদের নানা কাজেও সহায়তা করবে। তৃতীয়বারের মতো এবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে জানান সচিব।
মাউশি কর্মকর্তারা জানায়, এই নির্বাচনে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আটজন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে। এর মধ্য থেকে একজন প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবেন। আর স্কুলে সাধারণত প্রতিনিধিদের মন্ত্রী এবং প্রধান প্রতিনিধিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডাকা হয়।
এই প্রতিনিধিদের আটটি কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেগুলো হলো- পরিবেশ সংরক্ষণ (বিদ্যালয়, আঙ্গিনা ও টয়লেট পরিষ্কার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা); পুস্তক ও শিখন সামগ্রী, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং সহপাঠ কার্যক্রম; পানি সম্পদ; বৃক্ষ রোপণ ও বাগান তৈরি, দিবস ও অনুষ্ঠান উদযাপন এবং অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন, আইসিটি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই নির্বাচনের সকল কার্যক্রমই আয়োজন করবে শিক্ষার্থীরা। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনোনীত করে। অষ্টম ও নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে দু’জন নির্বাচন কমিশনার মনোনীত করা হয়। আর নির্বাচনে প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারেরও দায়িত্ব পালন করে শিক্ষার্থীরা।
অন্যান্য নির্বাচনের মতোই ব্যালট বাঙ্, ব্যালট পেপার, ভোট কেন্দ্র, বুথ থাকবে। তবে প্রার্থীদের কোন প্রতীক দেয়া হবে না। এই কেবিনেটের মেয়াদ হবে এক বছর।
নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রতিটি শ্রেণী থেকে দুজন করে সহযোগী সদস্য মনোনীত করবে। এই কেবিনেট প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার করে সভা করবে। ছয় মাস পর পর সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে সাধারণ সভা করবে। ২০১৫ সাল থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর ২০১০ সাল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই আদলে নির্বাচন হয়ে আসছে।
জানা গেছে, ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে আট সদস্যের এই স্টুডেন্টস কেবিনেট। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর যে কোন শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে। একজন ভোটার সর্বোচ্চ আটটি ভোট দিবে। এর মধ্যে প্রতি শ্রেণীতে একটি করে এবং যে কোন তিন শ্রেণীতে সর্বোচ্চ দুটি করে ভোট দেয়া যাবে। ফলে প্রতিটি শ্রেণী থেকে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। পাঁচ শ্রেণীতে পাঁচজন নির্বাচনের পর সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত তিন শ্রেণীর আরও তিনজন নির্বাচিত হবে।