ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদসহ নানা সুবিধা বাতিলের পর সেখানকার বাসিন্দাদের বিক্ষোভ–আন্দোলনের আশঙ্কায় প্রায় চার হাজার জনকে গ্রেফতার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। হাজার হাজার সেনা মোতায়েন এবং কারফিউর মধ্যেই এই কাশ্মীরিদের গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। খবর: এএফপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ম্যাজিস্ট্রেট বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, বহুল সমালোচিত জননিরাপত্তা আইনের আওতায় চার হাজার কাশ্মীরিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিতর্কিত এই আইনের আওতায় কোনো ধরনের অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই কর্তৃপক্ষ যে কাউকে ধরে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাবন্দি রাখতে পারে।
এএফপির খবর মতে, গ্রেফতার বেশিরভাগ কাশ্মীরিকেই অন্য রাজ্যের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ কাশ্মীরের কারাগারগুলো আগে থেকেই ভর্তি ছিল, নতুন করে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর সেখানে ঠাঁই হচ্ছিল না। এক্ষেত্রে কাশ্মীরের আশপাশের অনেক রাজ্যের কারাগারেই আগে থেকে ‘বিশেষ প্রস্তুতি’ দেখা যায় বলে জানা গেছে।
গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদায় সংবিধানে রাখা ৩৭০ অনুচ্ছেদ সম্প্রতি বাতিল করে দেয় নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার। সেদিন থেকেই অবরুদ্ধ ওই উপত্যকা। অনুচ্ছেদটি বাতিলের আগে নাটকীয় কায়দায় অঞ্চলটিজুড়ে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। বন্দি করা হয় সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আব্দুল্লাহসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক নেতাকে। ইন্টারনেট, ক্যাবল নেটওয়ার্কসহ যাবতীয় সব যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। কারফিউ জারি করে রাস্তায় রাস্তায় সাঁজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয় সশস্ত্র বাহিনী।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা চলে যাওয়ার সময় উপমহাদেশ ভাগ হয়ে গেলে তখন কাশ্মীরের শাসকরা বিশেষ শর্তে ভারতে যোগ দেন। সেই শর্তটিই ৩৭০ অনুচ্ছেদ আকারে সংবিধানে সংরক্ষিত ছিল। এই অনুচ্ছেদের আওতায় কাশ্মীর আলাদা সংবিধান ও পতাকার স্বাধীনতা ভোগ করতো। এমনকি সেখানে সরকারি চাকরি, জমি কেনা এবং ব্যবসা করার সুযোগটিও ছিল কেবল কাশ্মীরিদের জন্যই। এই অনুচ্ছেদটি বাতিল করায় এখন এসব অধিকার বঞ্চিত হবে কাশ্মীরিরা।
ভারতীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম কাশ্মীরের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক বললেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, রাস্তায় রাস্তায় সশস্ত্র বাহিনীর টহল সত্ত্বেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ–আন্দোলন হচ্ছে। এসব বিক্ষোভ–আন্দোলনের খবর প্রচারেও কড়াকড়ি দেখা যাচ্ছে কাশ্মীরে।