বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে ৪ দিনের এক সরকারি সফরে নয়াদিল্লীর উদ্দেশে আজ সকাল ১০টা ১০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ত্যাগ করেন।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তিনি এ সফরে যাচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতে গিয়েছেন।
একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এফবিসিসিআই’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল এবং সিনিয়র সাংবাদিক সম্বলিত একটি মিডিয়া প্রতিনিধি দলও সঙ্গে রয়েছেন। খবর বাসস।
স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারি বিমানটি নয়াদিল্লীর ভারতীয় বিমানবাহিনীর পালাম স্টেশনে অবতরণের কথা রয়েছে। ভারতের ভারি শিল্প, পাবলিক এন্ড এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়া এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
পালাম স্টেশন থেকে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে রাষ্ট্রপতি ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সেখানে অবস্থান করবেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বিকেলে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর সন্ধ্যায় দিল্লীস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রধানমন্ত্রীকে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দেয়া হবে। সংবর্ধনায় কূটনীতিক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন বলে হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে।
সফরের দ্বিতীয় দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হানিনাকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধ পরিদর্শনে গিয়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
৮ এপ্রিল হায়দ্রাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় দুই নেতা একান্তেও কিছু সময় অতিবাহিত করবেন। আলোচনার পর দুই নেতার উপস্থিতিতে একগুচ্ছ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। এসময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীর হিন্দি সংস্করণ উন্মোচন করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
বিকালে ম্যানেকশ’ সেন্টারে মহান মু্িক্তযুদ্ধে শাহাদৎবরণকারী ভারতীয় সৈনিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৭ শহীদ ভারতীয় সেনা পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা পত্র প্রদান করবেন।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ৯ এপ্রিল সকালে প্রধানমন্ত্রী আজমীর শরীফ যাবেন। সেখানে খাজা মঈনউদ্দিন চিশতি (রহঃ)-এর দরগাহ শরীফ জিয়ারত করবেন। একইদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সাথে দেখা করবেন। পরে তিনি রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
১০ এপ্রিল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাজমহল হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। বিকেলে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে দিল্লী ত্যাগ করবেন।
দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা জানানোর জন্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দিল্লীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী’র ছবি শোভা পাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের পতাকা পাশাপাশি উড়ছে রাস্তার দু’পাশে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসার পর এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম ভারত সফর।
এরআগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন এবং ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে আসেন।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আসম ফিরোজ, তিনবাহিনী প্রধানগণ, ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন এবং উচ্চ পর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।