ভালবাসার টান কি একেই বলে?

সত্তর বছরের বেশি সময় একসঙ্গে কাটিয়েছেন। আর চলেও গেলেন প্রায় একসঙ্গেই। মাত্র চার মিনিটের ফারাক। চার মিনিটের আগে-পরেই মারা গেলেন এক ব্রিটিশ দম্পতি।

গত বুধবার চলে গেলেন উইল্ফ। লেস্টারশায়ারের উইংস্টনে একটি ডে কেয়ার হোমে সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে মারা যান তিনি। উইল্ফের মতোই চিকিৎসাধীন ছিলেন ৯১ বছরের বৃদ্ধা ভেরা। তবে এক হাসপাতালে নন। তিনি ছিলেন শহরেরই অন্য একটি হাসপাতালে। সেখানেই সে দিন ৬টা ৫৪ মিনিটে মারা যান ভেরা। মৃত্যুর সময়ে তিনি জানতেনও না তাঁর উইল্ফ চার মিনিট আগেই চলে গিয়েছেন।

গত এক বছর ধরেই স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছিলেন লেস্টারশায়ারের ইঞ্জিনিয়ার উইল্ফ রাসেল। মাস দু’য়েক আগে তাঁর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। এমনকী, স্ত্রী ভেরাকেও চিনতে পারছিলেন না ৯৩ বছরের বৃদ্ধ উইল্ফ। দম্পতির নাতনি স্টেফানি ওয়েলচ বলেন, “ডিমেনশিয়ায় ভুগছিলেন ঠাকুরদা। সে জন্য বছরখানেক আগে তাঁকে ডে কেয়ারে ভর্তি করানো হয়। মাস দুয়েক আগে ঠাকুরমা তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন তাঁকে চিনতেই পারেননি ঠাকুরদা। সেই থেকেই বিছানা নেন ঠাকুমা।”

বিয়ের দিনে উইল্ফ ও ভেরা। ছবি: ফেসবুক।

উইল্ফের সঙ্গে ভেরার প্রথম দেখা হয়েছিল সত্তর বছরেরও আগে। উইল্ফ তখন আঠারো বছরের কিশোর। আর ভেরার বয়স ষোলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হয়ে ইতালি ও উত্তর আফ্রিকা যাওয়ার আগেই তাঁদের এনগেজমেন্ট হয়। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেই বিয়ে। এর পর সেনাবাহিনী ছেড়ে মিডল্যান্ড এলাকাতে এক সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ শুরু করেন উইল্ফ। সেই থেকে এক রাতের জন্যও আলাদা থাকেননি উইল্ফ আর ভেরা। বছর দশেক আগে স্টেফানির বাবা পিটার রাসেলের বাড়ির কাছে লেস্টারশায়ারের চলে আসেন উইল্ফ-ভেরা। তাঁদের দু’টি ছেলেও হয়। নাতি-নাতনি নিয়ে ভরপুর সংসার তাঁর।

ঠাকুমাকে আদর করে ‘ন্যান’ বলে ডাকতেন স্টেফানি। সেই ঠাকুমার মৃত্যুতে স্টেফানি বলেন, “আমার মনে হয়, ন্যান যেন ঠাকুরদার চলে যাওয়ার অপেক্ষাতেই ছিলেন। তাঁর মন ভেঙে গিয়েছিল।” স্টেফানির কথায়, “গত রবিবার আমি ন্যানকে দেখতে গিয়েছিলাম। চোখ খুলে প্রথম জানতে চাইলেন, উইল্ফ কোথায়?” একে অপরের থেকে দূরে থাকলেও ভেরা যে উইল্ফের কাছাকাছিই ছিলেন তা তার কথাতেই বোঝা যায়। স্টেফানি জানিয়েছেন, সেই রবিবার তাঁর ন্যান বলেছিলেন, “আমরাই আদর্শ জুটি, তাই না!”